ছবি- সংগ্রহ
সুর, মাটি আর মানুষের আত্মিক বন্ধনের নাম লোকসংগীত। সেই সুরে, সেই টানে আজ সিলেটের শহীদ মিনারে শুরু হলো বাউল হেলাল উদ্দিন সরকার লোক উৎসব ২০২৫-একটি গানের উৎসব, এক আত্মার আহ্বান।
দুপুর ২টায় যখন উৎসবের দ্বার খুলে যায়, চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে একধরনের শান্ত উল্লাস। যেন সিলেটের আকাশ, বাতাস সবই একসঙ্গে মেতে ওঠে লোকজ সুরে। শহরের হৃদয়ে জমে ওঠে বাউলের বাঁশির ডাক, দোতারার কান্না, আর খোলের কাঁপন।
উৎসবের আহ্বায়ক এস এম মানিক এর সভাপতিত্বে, এবং সঞ্চালক জান্নাতুল নাজনীন আশার প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি পায় এক উষ্ণতা, পায় এক মানবিক আবহ। প্রধান অতিথি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, বিশেষ অতিথি অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন তরফদার,আর লোকসংগীত গবেষক সুমন কুমার দাস-উদ্বোধন করলেন স্মৃতির এই মঞ্চ।
সুমন কুমার দাস বললেন, ‘শুদ্ধতাই বাউলের প্রাণ। মতের পার্থক্য ভুলে যদি আমরা আদর্শকে ধারণ করি, তাহলেই বাউল হবে সম্পূর্ণ।’ প্রধান বক্তা ড. জাহিরুল ইসলাম অচিনপুরী মনে করিয়ে দিলেন আত্মপর্যালোচনার কথা-‘বাউল সমাজে আজ যে ভাঙন, তা শুধরাতে হবে ভেতর থেকে। লোক উৎসব হোক সেই আলো।’
সভাপতির বক্তব্যে এস এম মানিক বললেন, ‘লোকসংগীত আমাদের শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে। হেলাল উদ্দিন সরকার ছিলেন সেই শিকড়ের একজন অগ্রসেনানী। তাঁর স্মরণে এই আয়োজন আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনাকে জাগিয়ে তুলবে।’
উৎসব যখন এগিয়ে চলে বিকেল ছুঁয়ে সন্ধ্যার দিকে, তখন মঞ্চে আসেন একে একে সিলেটের খ্যাতিমান বাউল শিল্পীরা। তাঁদের কণ্ঠে ভেসে আসে হাছন, লালন, আর রাধারমণ-লোকসঙ্গীতের চিরন্তন আহ্বান। গভীর রাত পর্যন্ত চলবে এই আয়োজন।
উৎসবে আসা এক বাউল জানালেন তাঁরই ভাষায়, এই উৎসব যেন এক দিনের আয়োজন নয়, এ যেন হাজার বছরের গানে মিশে থাকা মানুষের গল্প। এ এক আত্মার সংলাপ, যেখানে মাটি, মানুষ আর সুর এক হয়ে যায়। এ উৎসবের সুর বয়ে চলুক আরও বহুদূর, বাউলের বাণী ছড়িয়ে পড়ুক গ্রাম থেকে শহর, হৃদয় থেকে হৃদয়ে।
