মধ্যপ্রাচ্য
সংঘাত থামলেও আতঙ্ক কাটেনি
যুদ্ধবিরতির ফলে সাময়িক স্বস্তি ফিরলেও ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের রেশ থেকে গেছে
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫ ১৭:২৭

ছবি- সংগ্রহ
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে টানা ১২ দিনের সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও সংঘাতের রেশ এখনো রয়ে গেছে। একদিকে ইসরায়েলে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন হাজার হাজার মানুষ, অন্যদিকে ইরানে একাধিক ফাঁসি কার্যকর ও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে নতুন গ্রেপ্তার হয়েছে। পাশাপাশি কূটনৈতিক স্তরে চলছে ব্যস্ততা, তীব্র বাকযুদ্ধ এবং দাবি-প্রতিদাবির পালা।
ইসরায়েলে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন প্রায় ৪০ হাজার
ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, যানবাহন ও ব্যক্তিগত সম্পদের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইসরায়েলে জমা পড়েছে ৩৮ হাজার ৭০০টির বেশি আবেদন। সবচেয়ে বেশি আবেদন এসেছে রাজধানী তেল আবিব থেকে (২৪,৯০০+) এবং আশকেলন থেকে (১০,৭০০+)।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ একটি বিশেষ ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠন করেছে, তবে কী পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, তা এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
ইরানে পাল্টা ব্যবস্থা: গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ফাঁসি ও গ্রেপ্তার
ইসরায়েলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে আরও তিনজনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এর আগে একই অভিযোগে অন্তত আরও তিন ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ দিনে ইরানে এ অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত ৭০০ জন।
ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুজেস্তানে আরও ২৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেছে দেশটির কৌঁসুলিরা।
পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা ও তথ্যযুদ্ধ
২২ জুন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার দাবি ঘিরে বিতর্ক চলছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, এসব স্থাপনা ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়েছে। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলায় স্থাপনাগুলোর বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।
রাশিয়া এই হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন’ এবং ‘তেজস্ক্রিয় দূষণের হুমকি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত জানান, আইএইএ-এর প্রতিবেদনেও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সামরিক উদ্দেশ্যের প্রমাণ নেই।
যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতা ও নোবেল মনোনয়ন
এই রক্তক্ষয়ী সংঘাত থামাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যস্থতা করে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন, যা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হয়েছে। এ ভূমিকাকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে এক মার্কিন কংগ্রেস সদস্য তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন।
তবে মার্কিন জনমত ট্রাম্পের পদক্ষেপে বিভক্ত। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত সমর্থন করছেন না ৫৬ শতাংশ মার্কিন নাগরিক। ডেমোক্র্যাটদের বড় অংশ এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন, বিপরীতে রিপাবলিকানদের বড় অংশ সমর্থন করেছেন।
কাতারে দুঃখ প্রকাশ ও কূটনৈতিক বার্তা
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মধ্যে কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করে। পরে কাতারের আমির শেখ তামিমের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, হামলার লক্ষ্য কাতার ছিল না এবং ইরান প্রতিবেশী দেশ কাতারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।
স্বাভাবিক হচ্ছে কূটনৈতিক কার্যক্রম
যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিনে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করেছে। তুলে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের নিরাপত্তা নির্দেশনা। কনস্যুলার কার্যক্রম এবং ভিসা সেবা ৩০ জুন থেকে পুরোদমে চালু হবে।
যুদ্ধবিরতির ফলে সাময়িক স্বস্তি ফিরলেও ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের রেশ থেকে গেছে রাজনীতি, নিরাপত্তা, এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। এ পরিস্থিতি ঘিরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কূটনৈতিক ও মানবিক সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে।