
ছবি: সংগ্রহ
সারাদেশের মতো বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) থেকে সিলেটসহ দেশের সব শিক্ষাবোর্ডে শুরু হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা।
এবার সিলেট বোর্ডে পরীক্ষার্থী বসছে ৬৯ হাজার ৬৮৩ জন, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ জন কম। সারাদেশে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন, যা গত বছরের চেয়ে ৮১ হাজার ৮৮২ জন কম।
একই সময়ে সিলেট জেলায় এইচএসসি পরীক্ষার প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। এবার ৩২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছে।
এই পরিসংখ্যান হয়তো আপাতদৃষ্টিতে পরস্পরবিরোধী মনে হবে, তবে এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে সময়, সমাজ ও শিক্ষানীতির এক বাস্তবচিত্র।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর ভাষ্য অনুযায়ী, অনেক কলেজে এইচএসসি শ্রেণিতে ভর্তি না হওয়া এবং শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখী প্রবণতা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাসের অন্যতম কারণ। এটি কেবল শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, সিলেটের প্রবাস-সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক সক্ষমতারও একটি ছায়া ফেলে।
বর্তমানে মাধ্যমিক পর্যায়ের পর অনেক শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিকে না গিয়ে O/A Level বা সরাসরি বিদেশি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়মুখী হচ্ছে। এছাড়া উচ্চমাধ্যমিক পাশের আগেই বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স বা আইটি ট্রেনিং-এর দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। যা একদিকে মুক্তচিন্তার বিকাশ হলেও, আরেকদিকে প্রথাগত শিক্ষার চাহিদা হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়।
প্রতিষ্ঠান বাড়ার মানে কি শিক্ষার প্রসার? না কি সংখ্যা বাড়িয়ে দায়িত্ব এড়ানো? সিলেটে কলেজের সংখ্যা বাড়লেও সেই কলেজগুলোতে ভর্তি কম, শিক্ষক সংকট এবং অবকাঠামোগত ঘাটতি বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচিত। অনেক কলেজ মূলত একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের নামমাত্র শিক্ষালয় হিসেবে টিকে আছে। তাই পরীক্ষার্থীর তুলনায় প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির এই চিত্র প্রশ্ন তোলে বাস্তবিক মান উন্নয়ন নিয়ে।
এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। উদ্দেশ্য, নকল ও প্রশ্নফাঁস প্রতিরোধ। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, এতদিন ধরে যদি কোচিং বন্ধ করেই সুষ্ঠু পরীক্ষা নিশ্চিত করা যায়, তবে শিক্ষা ব্যবস্থায় কোচিংয়ের এত প্রভাব কেন?
গুজব বন্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ প্রয়োজন, কিন্তু সমান জরুরি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করা। যাতে তারা বুঝতে পারে, মূল্যায়ন মানেই শুধু নম্বর নয়, বরং প্রকৃত শিক্ষা।
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারাদেশে গত বছরের চেয়ে ৮১ হাজার ৮৮২ জন পরীক্ষার্থী কম। এই পরিসংখ্যান কেবল সংখ্যা নয়, এটি আমাদের তরুণ প্রজন্মের শিক্ষামুখী পথচলার গতি ও গন্তব্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমরা কি শিক্ষাকে যথাযথভাবে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারছি? নাকি তরুণরা বিকল্প পথে হাঁটছে কারণ তারা আশাহত?
প্রভাষক মিহির কান্তি দাস এ প্রসঙ্গে বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা এক সময় ছিল জীবনের বড় পরীক্ষা। আজ সেই পরীক্ষার গুরুত্ব আছে, কিন্তু রূপ বদলেছে। শিক্ষার্থী কমছে, কিন্তু পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ কমছে না। বরং এখনকার চ্যালেঞ্জ আরও গভীর। সামাজিক, মানসিক ও কাঠামোগত।
তিনি বলেন, আমরা যদি সত্যিই শিক্ষার মান নিয়ে ভাবি, তবে শুধু পরীক্ষার্থী নয়, পরীক্ষার প্রক্রিয়া, উদ্দেশ্য এবং পরিণতিও আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে। নয়তো, শিক্ষার ভবিষ্যৎ শুধু পরিসংখ্যানে আটকে যাবে-গণনার বাইরে থেকে যাবে মানুষ, মনন, ও মান।