‘এবারের নির্বাচন সত্যিই চ্যালেঞ্জিং’ - উপদেষ্টা ফাওজুল কবির
‘বিনিয়োগকারীরা জানতে চান সরকারের মেয়াদ কত দিন। তাই দ্রুত নির্বাচন হয়ে দীর্ঘমেয়াদি সরকার আসা জরুরি।’
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৩৮
ছবি: সংগৃহীত।
অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, এবারের নির্বাচন সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। সরকার চেষ্টা করছে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি করতে।
গতকাল একটি জাতীয় দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে যাঁরা অনিয়মে জড়িত ছিলেন তাঁদের সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাবেক দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কারাগারে আছেন, যা ভবিষ্যতের দায়িত্বশীলদের সতর্ক করবে। তিনি আশাবাদী, এবার আর পোলিং এজেন্ট তাড়ানো বা ভোটে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটবে না।
তিন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা সাবেক এই বিদ্যুৎ সচিব বলেন, ‘অর্থপূর্ণ উন্নয়নের জন্য এক বছর যথেষ্ট নয়। রেলে ইঞ্জিন-কোচের সংকট বা গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নে সময় লাগে দুই থেকে তিন বছর। আমরা ভিত্তি তৈরি করছি, যাতে আগামী সরকার এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।’
বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বকেয়া বিল পরিশোধ, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রে খরচ কমানো, ভর্তুকি হ্রাস ও বিতর্কিত আইন বাতিল করার কথা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘এবারের গ্রীষ্মে লোডশেডিং হয়নি, বিদ্যুতের দামও বাড়েনি।’
বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদি সরকারের প্রয়োজন
সৌদি আরব সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ফাওজুল কবির বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা জানতে চান সরকারের মেয়াদ কত দিন। তাই দ্রুত নির্বাচন হয়ে দীর্ঘমেয়াদি সরকার আসা জরুরি।’ সমুদ্রের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র আহ্বানের জন্য নথিপত্র তৈরি করে রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অন্তর্ভুক্তি ও জবাবদিহি
সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, মন্দির উন্নয়ন, জমি বরাদ্দ এবং রিকশাচালকদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা না করে হুট করে রিকশা বন্ধ না করার সিদ্ধান্তই অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ার দৃষ্টান্ত।
জবাবদিহির প্রসঙ্গে বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই তিনি সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছেন। দায়িত্ব শেষে আবারও বিবরণী দিয়ে সাংবাদিকদের যাচাইয়ের সুযোগ রাখা হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তি
বিতর্কিত চুক্তি বাতিল না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘এসব আন্তর্জাতিক চুক্তি, ঋণ ও আইনি জটিলতার বিষয় রয়েছে। দুর্নীতির প্রমাণ মিললে বা শর্ত ভঙ্গ হলে বাতিল করা যাবে।” আদানি ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ব্যয় পর্যালোচনা চলছে বলে জানান তিনি।
ক্যাপাসিটি চার্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি মূলধন খরচ। তবে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র ঋণ শোধ করে ফেলেছে, তাদের ক্ষেত্রে চার্জ বাতিল করা হবে।’
মেগা প্রকল্পে সতর্কতা
ফাওজুল কবির জানান, অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত ব্যয় বাড়ানো প্রকল্প বাতিল করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে পদ্মা সেতুর ভাঙ্গায় লোকশূন্য এলাকায় এসি রেলস্টেশন নির্মাণ বাতিলের কথা উল্লেখ করেন তিনি। কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের উড়ালসড়ক প্রকল্পও বাদ দেওয়া হয়েছে।
পরিবহন খাতের নৈরাজ্য
তিনি বলেন, ‘পুরোনো ও নিম্নমানের বাস দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে। নতুন মানসম্মত যানবাহন আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। হঠাৎ পুরোনো গাড়ি সরালে সংকট তৈরি হবে, তাই ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ দুর্ঘটনায় দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিতে আধুনিক সংকেতব্যবস্থা ও অ্যাম্বুলেন্স কেনার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
