‘মুসলিম অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুতে আসামে কংগ্রেস-বিজেপির তীব্র লড়াই, উত্তাল রাজনীতি
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:২৭
ছবি: সংগৃহীত।
আসামে আবারও উসকে উঠেছে পুরোনো ক্ষত। রাজ্যের বিজেপি কমিটি সামাজিক মাধ্যমে একটি এআই-তৈরি ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে, যেখানে ‘বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের’ হুমকি তুলে ধরা হয়েছে। ভিডিওটি প্রকাশের পরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়ে কংগ্রেস।
গোহাটি থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে কংগ্রেস নেতারা অভিযোগ করেন-এভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনমত উত্তেজিত করা বেআইনি কাজ। বিরোধীদলীয় নেতা দেবব্রত শইকিয়া সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তোলেন। তাঁর প্রশ্ন-২০১৪ সালে অভিবাসন রোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কিন্তু সীমান্ত দিয়ে এখনও অবাধ প্রবেশ ঘটছে কেন? সীমান্ত রক্ষায় দায়িত্বে থাকা বাহিনী-বিএসএফ কিংবা সীমান্ত পুলিশের ভূমিকা কোথায়?
শইকিয়া আরও বলেন, ধর্ম নয়, বিদেশি মানেই বিদেশি। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চকে সীমারেখা ধরে করা আসাম চুক্তির শর্ত ভেঙেছে বিজেপি সরকার। নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক ছাড় দিয়ে সেই চুক্তিকে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর মতে, এভাবে নাগরিকত্ব বাড়ানো হলে আসামের জনসংখ্যার গঠন ও সংস্কৃতির আসল চরিত্র পাল্টে যাবে।
অন্যদিকে বিজেপি পাল্টা সুরে জানায়, ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে, তা মিথ্যা নয়, বাস্তব। রাজ্য সহ-সভাপতি রত্না সিং অভিযোগ করেন, বহিরাগতরা বাজার, জমি ও অর্থনীতি দখল করে নিয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, প্রকৃত আসামি মুসলিমরা নয়, বরং বহিরাগতরাই স্থানীয়দের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। কংগ্রেসের শাসনকালেই সমস্যার সমাধান না হয়ে বরং আরও প্রকট হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে এআই-তৈরি ভিডিওর ব্যবহার নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। প্রযুক্তি এখন কেবল উন্নতির হাতিয়ার নয়, বরং রাজনীতির ময়দানে বিভাজনের অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। বিরোধীরা একে বলছে ‘মানুষকে বিভক্ত করার খেলা’, আর ক্ষমতাসীনরা দাবি করছে, এটি ‘চোখে আঙুল দিয়ে সত্য দেখানো’।
তবে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে-এত প্রতিশ্রুতি, আইন সংশোধন ও আন্দোলনের পরও কেন অভিবাসন সমস্যার সমাধান হলো না? কার দায়ে সীমান্ত পেরিয়ে এখনও মানুষ ঢুকে পড়ছে? আসন্ন নির্বাচনে এই ইস্যুই কি রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হবে-এখন সেটিই বড় প্রশ্ন।
