নির্বাচন ঘিরে নতুন সমীকরণ: বিএনপি-জামায়াত আলাদা পথে, বাড়ছে জোট তৎপরতা
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৪৫
ছবি: সংগৃহীত।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি ভেতরে ভেতরে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনকেন্দ্রিক কৌশল ও জোট নিয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিনের মিত্র হলেও এবার পৃথক পথে হাঁটছে। দুটি দলই নিজেদের মতো করে জোট গঠনের আলোচনায় ব্যস্ত। পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বামপন্থি দল ও ইসলামি ধারার কয়েকটি সংগঠনও নতুন জোটের সম্ভাবনা খুঁজছে।
বিএনপির বড় জোটের প্রস্তুতি
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোকে নিয়েই নির্বাচনে যেতে চায়। এজন্য ডান-বাম ও ইসলামি ধারা মিলিয়ে একটি বড় জোটের চেষ্টা চলছে। সম্ভাব্য মিত্রদের মধ্যে রয়েছে-লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, গণফোরাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১২ দলীয় জোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) নেতৃত্বাধীন জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, বাংলাদেশ লেবার পার্টি এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি ইসলামি দল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর আমরা জোট নিয়ে আলোচনা করব। প্রয়োজন হলে জোট হবে। এখন সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা কঠিন।’
জামায়াতের ইসলামি জোট
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত আন্দোলন ও জাগপা প্রমুখ দলকে সঙ্গে নিয়ে অভিন্ন কর্মসূচি চালাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য নির্বাচনকেন্দ্রিক আসন সমঝোতা বা ইসলামি জোট গঠন। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ‘ইসলামপন্থি দলগুলো এক জায়গায় থাকার চেষ্টা করছে। আলোচনা চলছে।’ ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান জানান, প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে।
এনসিপি ও নতুন উদ্যোগ
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) উদারপন্থি কয়েকটি দল নিয়ে জোট করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে এনসিপি নেতারা বলেছেন, এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বামপন্থিদের বিকল্প জোট
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নেতৃত্ব দিচ্ছে একটি বামপন্থি বিকল্প জোট গঠনে। এতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ছয়টি দল ছাড়াও আদিবাসী, দলিত ও নাগরিক সংগঠনকে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক বন্দোবস্তের বদল চাই। বিকল্প জোট গড়ার চেষ্টা করছি।’
বিশ্লেষকদের দৃষ্টি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি বর্তমানে ভোটের রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে রয়েছে। জামায়াতও অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে আছে। তবে কৌশলগত সিদ্ধান্তে ভুল হলে প্রত্যাশিত ফল নাও মিলতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের মতে, ইসলামপন্থি ও বামপন্থি দলগুলোও শেষ পর্যন্ত আলাদা জোট বা ঐক্যবদ্ধ শক্তি গঠন করতে পারে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতাদের যৌথ সফরকে বিশ্লেষকরা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে দেখছেন। দেশে ফিরে তাদের কার্যক্রমে এর প্রতিফলন ঘটতে পারে।
