https://www.emjanews.com/

10682

tourism

প্রকাশিত

২০ অক্টোবর ২০২৫ ১২:৪৫

পর্যটন

পুরান ঢাকার নবাববাড়ির পুষ্করিণী: কোলাহলের মাঝে এক টুকরো প্রশান্তি

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ১২:৪৫

ছবি: সংগৃহীত।

ইট-কংক্রিটের ভিড়ে ঢাকা শহর এখন প্রায় জলাশয়হীন। অথচ সেই কোলাহলময় পুরান ঢাকার বুকে আজও টিকে আছে এক টুকরো শান্ত সবুজ জলরাশি-গোল তালাব পুকুর। আহসান উল্লাহ রোডের পাশে, আহসান মঞ্জিলের পশ্চিমে অবস্থিত এই প্রাচীন পুকুরটি স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ‘নবাববাড়ির পুষ্করিণী’ নামে।

যদিও চারপাশে উঠে গেছে উঁচু দালান, পুকুরটি আজও পুরান ঢাকার মানুষদের জীবনযাপনের অংশ। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে এর ঘাট। এখানে কেউ নিয়মিত গোসল করেন, কেউ সাঁতার কাটেন, কেউ আবার বিকেলে এসে একটু প্রশান্তি খোঁজেন।

 ইতিহাসের স্রোতে নবাববাড়ির ঐশ্বর্য

গোল তালাব পুকুরের ইতিহাস প্রায় দুই শতাব্দী পুরোনো। ধারণা করা হয়, নবাব আবদুল বারী প্রথম এটি খনন করেন। পরে নবাব খাজা আলিমুল্লা ১৮৩০ সালে এটি কিনে সংস্কার করেন এবং ১৮৮৬ সালে দ্বিতীয়বার সংস্কারের মাধ্যমে বর্তমান রূপ দেন। এরপর এটি নবাব পরিবারের ঐশ্বর্যের প্রতীক ও সামাজিক মিলনকেন্দ্র হয়ে ওঠে।

যদিও ‘গোল তালাব’ বলা হয়, বাস্তবে পুকুরটি পুরোপুরি গোল নয়-বরং উত্তর-দক্ষিণে লম্বাটে, ডিম্বাকৃতির। ‘তালাব’ শব্দটি উর্দু, অর্থাৎ পানি বা জলাশয়।

 জীবনের সঙ্গে মিশে থাকা পুকুর

আজও প্রতিদিন অনেকেই এখানে গোসল করতে আসেন। ‘এত বড় পুকুর আশপাশে আর নেই। গোসলের জন্য আগে ৫ টাকা, এখন ১০ টাকা নেওয়া হয়। তবে পানি বিশুদ্ধ রাখার জন্য পুকুরে সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার নিষিদ্ধ। ঘাটের পাশে এসব ব্যবহারের জন্য আলাদা জায়গা করা হয়েছে।

 মালিকানা ও রক্ষণাবেক্ষণ

একসময় ওয়ারিশানদের মধ্যে দীর্ঘদিন মামলা চলেছিল পুকুরের মালিকানা নিয়ে। পরে ২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ‘মৌলভি খাজা আবদুল্লাহ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ পুকুরটির মালিকানা পায়। বর্তমানে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ‘নবাববাড়ি অ্যাংলিং কমিটি’ পুকুরের পরিচর্যা করছে।

ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সদস্য খাজা গোলাম হোসেন জানান, ‘বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় পুকুরের পানি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। প্রয়োজনে ওয়াসার পানি দিয়ে ভরাট করে পানির স্তর ঠিক রাখা হয়। কোনো নালা বা পয়োনিষ্কাশন লাইন এই পুকুরে যুক্ত নয়, তাই পানি সবসময় বিশুদ্ধ থাকে।’

নয়নাভিরাম দৃশ্য

২ দশমিক ২৩ একর আয়তনের এই পুকুরটির গভীরতা প্রায় ২৩ ফুট। চারপাশে নারকেল, আম, আতা, খেজুর, নিমসহ নানা গাছের সারি একে দিয়েছে অনন্য সৌন্দর্য। বিকেলে এখানে দাঁড়ালে শহরের কোলাহল পেরিয়ে অন্য এক জগতে পৌঁছে যাওয়া মনে হয়।

 মাছ ধরা ও বিনোদন

পুকুরে নিয়মিত মাছ চাষও করা হয়। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে টিকিট কেটে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সুযোগ থাকে। এতে অংশ নিতে আশপাশের অনেকেই ভিড় করেন।

 ঢাকার প্রাণে এক ফোঁটা শান্তি

পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি রাস্তাঘাট আর যানজটের মধ্যেও গোল তালাব পুকুর এখনো টিকে আছে শহরের প্রাণে এক শীতল প্রশান্তি হয়ে। এটি শুধু একটি জলাশয় নয়-ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির জীবন্ত নিদর্শন।

পুরান ঢাকার হৃৎস্পন্দন যেন এই পুকুরেই ধ্বনিত হয়-সবুজে, জলে, স্মৃতিতে।