‘রেইনবো নেশন’: অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র কাঠামোর স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিএনপি
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ১২:২৫
                                                            ছবি: সংগৃহীত।
রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে ঘোষিত ৩১ দফার রূপরেখায় বিএনপি দ্বিতীয় দফায় অন্তর্ভুক্ত করেছে ‘রেইনবো নেশন’ বা ‘রংধনু জাতি’-র দর্শন। দলটির শীর্ষ নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে এ ধারণাকে জনগণের সামনে তুলে ধরছেন।
রেইনবো নেশনের মূল ধারণা
‘রেইনবো নেশন’ তত্ত্বের উৎপত্তি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ-পরবর্তী সময়ের সমাজ গঠনের প্রক্রিয়া থেকে। আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু এই ধারণার প্রচলন করেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল এমন এক সমাজ তৈরি করা যেখানে জাতি, বর্ণ ও ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিক সমান অধিকার ও মর্যাদা ভোগ করবে। পরবর্তীতে নেলসন ম্যান্ডেলা রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর (১৯৯৪) এই দর্শনকে জাতীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে ‘রংধনু জাতি’ হিসেবে অভিহিত করেন।
বিএনপির দৃষ্টিতে রেইনবো নেশন
সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে বিএনপি সব জাতিগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে একটি ‘রেইনবো নেশন’ গড়ে তুলবে।
তিনি বলেন,‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০২২ সালে ৩১ দফা ঘোষণা দিয়েছেন, যেখানে বলা হয়েছে-আমরা এমন এক রেইনবো নেশন গড়ব, যেখানে সব সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত হয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন,‘নতুন প্রজন্মের মধ্যে ভাষা ও সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটছে। এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে সম্মান ও স্বীকৃতি দিতে ‘রেইনবো নেশন’ ধারণা প্রাসঙ্গিক। এটি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করেই নতুনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।”
দলটির নেত্রী ও সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন,‘গত এক দশকে নানা ইস্যু তুলে জাতিকে বিভাজিত করা হয়েছে-কখনো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ, কখনো ধর্ম বা জঙ্গিবাদের তকমা দিয়ে। আমরা চাই সবাইকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করতে-সেই লক্ষ্যেই রেইনবো নেশনের ধারণা।’
বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রেইনবো নেশন’ একটি তুলনামূলক নতুন ধারণা। বিএনপি বলছে, তারা এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠন করতে চায়, যেখানে সব ধর্ম, ভাষা ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা থাকবে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, দীর্ঘদিনের পারস্পরিক অবিশ্বাস, সামাজিক বিভাজন এবং আদর্শিক টানাপোড়েন এই ধারণা বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম, ভাষা ও রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে বিভক্ত সমাজে ‘রেইনবো নেশন’ গঠন সহজ হবে না।
সুশাসন, রাজনৈতিক সহনশীলতা, নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং পারস্পরিক আস্থা গড়ে তুলতে পারলে বিএনপির এই স্বপ্ন বাস্তব রূপ নিতে পারে। অন্যথায়, এটি কেবল নীতিগত ঘোষণা হিসেবেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে।
                        
                        