https://www.emjanews.com/

6420

opinion

প্রকাশিত

২০ জুন ২০২৫ ১৫:১৮

মতামত

সিলেটে করোনা ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি: বাড়ছে ঝুঁকি, সচেতনতায় ঘাটতি

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫ ১৫:১৮

ছবি- সংগ্রহ

সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, সিলেট বিভাগে ধীরে ধীরে বাড়ছে করোনা ও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। যদিও এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে জনসচেতনতার অভাব ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার কারণে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক রূপ নিতে পারে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭ জন এবং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে কারও মৃত্যু না হলেও বেশ কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আর কেউ আক্রান্ত না হলেও, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
বর্তমানে করোনা আক্রান্ত ৭ জনের মধ্যে ৪ জন শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে, বাকিরা নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও আল-হারামাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, গেল ২৪ ঘণ্টায় ৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হলেও নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি। তবে আগের পরীক্ষায় ৭৩ জনের মধ্যে ৭ জন আক্রান্ত ছিলেন। এটি ভাবনার বিষয়।
এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, পরীক্ষা কম হচ্ছে, সচেতনতা আরও কম। মহামারির অভিজ্ঞতা থাকার পরও অনেকেই মাস্ক পরা, জনসমাগম এড়ানো ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের মতো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি: শহরের রোগ গ্রামে ছড়াচ্ছে
ডেঙ্গুর পরিসংখ্যান আরও চিন্তার। চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ জন, যার মধ্যে শুধু জুন মাসের প্রথম ২০ দিনেই ৫ জন শনাক্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন হবিগঞ্জ জেলায় ৯ জন, এরপর সিলেট ৭ জন, মৌলভীবাজার ৬ জন ও সুনামগঞ্জ ২ জন। আক্রান্তদের বেশিরভাগের 'ট্রাভেল হিস্ট্রি' রয়েছে, অর্থাৎ তাঁরা রাজধানী ঢাকা বা অন্যান্য উচ্চ-ঝুঁকির এলাকা থেকে এসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এটা আশঙ্কার বিষয় যে, ঢাকা বা অন্যান্য শহর থেকে ডেঙ্গু গ্রামের দিকে ছড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু স্থানীয় সরকার বা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তেমন কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। পরিচ্ছন্নতা অভিযান, মশানিধন কার্যক্রম ও গণসচেতনতা কার্যত নেই বললেই চলে।

জনসচেতনতার অভাবই বড় হুমকি
সিলেটের জনগণের বড় অংশ এখনো মনে করেন, ‘করোনা তো শেষই হয়ে গেছে’ অথবা ‘ডেঙ্গু শুধু শহরের রোগ’- এই মনোভাবই সবচেয়ে বড় হুমকি। সচেতনতা না বাড়ালে এই সংখ্যাগুলো কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হলেও, ‘কেউ মারা যাননি’ এই আশ্বাস যেন আত্মতুষ্টি না হয়ে যায়। মৃত্যু না হলেও, রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা ও শ্রমঘণ্টার ক্ষতি ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
 

করণীয়
স্বাস্থ্যবিধি পুনরায় মেনে চলা, বিশেষত জনসমাগমস্থলে মাস্ক ব্যবহার।
নিয়মিত করোনা ও ডেঙ্গু পরীক্ষা বাড়ানো।
জেলা-উপজেলায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও মশানিধন কার্যক্রম জোরদার করা।
গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো।
সিলেটে করোনা ও ডেঙ্গু সংক্রমণের সংখ্যাটা হয়তো এখনো বড় নয়, কিন্তু উপেক্ষা করলে তা ভয়াবহ রূপ নিতে সময় লাগবে না। এই রোগ দুটির বিরুদ্ধে লড়াই কেবল হাসপাতাল বা ডাক্তারদের নয়, এটি প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব। এখনই সময়-সচেতনতা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে আগাম বিপদ ঠেকানোর। আমাদের শিথিলতা যেন আগামী দুর্যোগের বীজ না হয়ে দাঁড়ায়।