ছবি: ইমজা নিউজ
মব-মচ্ছবের সময়ে এ যেন উল্টো ঘটনা ঘটল! আদালত প্রাঙ্গনে আসামি চড়াও সংবাদিকের ওপর। ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে যান। হাতের মোবাইল ফোনও কেড়ে নেন। ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় চলে ধাক্কা-ঠেলা, মারধর। অথচ হাতে হাতকড়া ছিল। পুলিশও ছিল। তবু আক্রান্ত সাংবাদিক। আগেও বলেছি-এখনও বলি, সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ হলে কিন্তু চারপাশ বোবা হয়ে যায়। মজা দেখে। মজা নেয়। কেন নেয়? হয়তো ঘুঘুবাদের গান।
গান থাকলে থাকুক। আগে জান নিয়ে বলি। সাদাপাথর উপাখ্যান পুরোটা সাংবাদিকের। এ জন্য কুম্ভকর্ণের হয়ে লুটেরাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়ে সাক্ষী রাখা হয়েছিল গণমাধ্যম। মানে পরিস্কার। শুরুতে সাংবাদিক, শেষেও সাংবাদিক। উন্মোচন-উন্মিলনে সাংবাদিক। তখন হয়তো উদ্দেশ্য নামের নীল নিহিত নকশা ছিল, সব দায় সাংবাদিকের ওপর চাপিয়ে দিয়ে গোঁফে তেল দিয়ে দিনাতিপাত করা। কিন্তু সেই দিনাতিপাত কঠোর কষাঘাতে চুরমার হয়ে গেছে। খোদ সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেছিলেন, সাদাপাথর লুটকাণ্ডে এমন জনপ্রতিবাদ তিনি প্রথম দেখেছেন। সাংবাদিকেরা অগ্রগামী হলে দেশের প্রান্তিক-অপ্রান্তিক সবকিছুই প্রথম এজেন্ডারূপ ধারণ করতে বাধ্য।
সেই বাধ্যবাকতায় হয়তো আমরা দেখেছি, দুর্নীতি দমন কমিশনের জটজলদি একটি তালিকা। এ তালিকা রাজনীতিকরণ করে হরণ আয়োজনের পুর্বাভাসও বলে দিয়েছে অনেককিছু। রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে প্রকৃতি লুটেরাদের এনে ফাইলচাপা বন্দোবস্ত পাকা করার পরিকল্পনা এখনো বিদ্যমান। কিন্তু বিদ্ধ যে সাংবাদিক, তার কিছু নমুনা তখনই অনুমিত হচ্ছিল। যে রাতে বিএনপি তার দাপুটে নেতাকে বহিস্কার করল, সেই রাতে রটিয়ে দেওয়া হলো ভুয়া খবর। রাত পোহানোর আগেই যেন আরেক ষড়যন্ত্র-জাল। কিন্তু ষড়যন্ত্রপ্রেমীরা জানে না, অবিচল সাংবাদিকেরা ঘরের খবর বরাবর পদদলিত করে এগিয়ে যান। যোদ্ধা কিন্তু মাঠে-ময়দানে ও ঘরেও। সুতরা! যে যাত্রায় ষড়যন্ত্র-জাল বিদীর্ণ হয়। ওই রাতেই চোখকান খোলা রাখতে বলেছি সহকর্মীদের। ষড়যন্ত্রের আঁকাবুকিও দেখেছি আরও কয়েকদিন।
দেখতে দেখতে এল যেন বৃহস্পতিবার দিনটি। দুপুরের ঘটনা। ‘আলফু চেয়ারম্যান’ নামের লোকটির কী রক্তচক্ষুর চাহনি! তার সব ক্রোধ সাংবাদিকের ওপর। আরও বেশি ক্রোধ ‘ইমজা নিউজ’-এর ওপর। দরবেশ বৃত্তান্ত ইমজানিউজই আপ করেছিল। নিউজটি সরাতে বিলাত থেকে তদবির হয়েছিল। পেশার বারোটা বাজায়নি। বাপবেটার হাতে হাতকড়া। এরপরও দুহাতে মারধর আর ক্যামেরা-মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ভিডিও পর্যন্ত ডিলিট করে দেয়। কেড়ে নেওয়া মোবাইলটি নিয়ে যায়। কী দুঃসাহস। অবাক ও বিস্ময় ঝড়ে পড়ে। পুলিশ কী করছিল, কী ছিল তাদের ভূমিকা? নিছক সাক্ষীগোপাল তারা নাকি গাছাড়া?
থাক, গায়ের কথায় ফিরি। ‘আমরা রইস্যা বুলে কালা ফারুক!’ নিজ গ্রামে এক পরিচিতি আর ঢাকার অন্ধকার জগতে আরেক পরিচিতি ছিল কুমিল্লার রশিদ ওরফে রইস্যার। রাজধানীর আন্ডারওয়ার্ল্ড অপরাধ জগতে ‘কালা ফারুক’ নামে ধরা পড়ার পর স্থানীয়রা সারল্যে এভাবেই বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। এ কথা দেশজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি করেছিল। এ কাহিনির মতো না হলেও খটকা ছিল আমার। আলফু মিয়া অথবা আলফু চেয়ারম্যান যে কাজী আব্দুল ওয়াদুদ আর বরইকন্দি থেকে যে ভোলাগঞ্জের নিয়ন্ত্রক- এ বিষয়টি অনেক পরে জেনেছিলাম। তখন গুলিতে আব্দুল আলী নামের একজন পাথরব্যবসায়ী নিহত হয়েছিলেন। মামলার পর ভেদ হয়েছিল সেই রইস্যা রহস্য!
এই সময়, সেই সময়; সব মিলিয়ে সব সময়ই সাংবাদিকদের কপাল মন্দ। আক্রান্ত হলে সব মৃদুমন্দ অন্ধত্ব জট পাকায়। তড়িৎ হস্তক্ষেপ চাইলে তনু চলে না আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ধীরলয়ে পদক্ষেপ আক্ষেপ হয়ে থাকে। কী করব আমরা সাংবাদিকেরা?
প্রতিবাদ-প্রতিক্রিয়ায় নিন্দা জানাব, মানববন্ধন করব। তারপর হয়তো লিখব কয়েকদিন! আর তো কিছু করার নেই! সুতরাং আলফু আস্ফালন হালের ভাইরাল রিপন মিয়ার ফেক হাসি ‘হা-হা-হা’ হয়েই থাকুক!