
কুয়ালালামপুরের বুকিত বিনতাং এলাকায় দাঁড়ালেই বোঝা যায় মালয়েশিয়ায় পর্যটনের জোয়ার চলছে। বিদেশি ভ্রমণকারীদের পদচারণায় এলাকা মুখর।
জার্মানি থেকে আসা দম্পতি জন ও মারিয়া বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় আসার মূল আকর্ষণ ছিল এখানকার খাবার ও সংস্কৃতি। ল্যাংকাউইয়ের সমুদ্রসৈকত আর কুয়ালালামপুরের টুইন টাওয়ার আমাদের মুগ্ধ করেছে।’
প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকেও পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
কুয়ালালামপুর ভ্রমণে আসা ঢাকার নাহিদা সুলতানা বলেন, ‘পরিবার নিয়ে এখানে ভ্রমণ সহজ ও সাশ্রয়ী। থিম পার্ক, অ্যাকোয়ারিয়াম আর ল্যাংকাউই দ্বীপ শিশুদের জন্য অসাধারণ।’
আরেক ভ্রমণকারী মিরাজ হোসেনের অভিজ্ঞতা শপিং ও খাবারকেন্দ্রিক- ‘বাজারগুলোতে দারুণ অফার মেলে, আর হালাল খাবার সহজে পাওয়া যায়।’
এই প্রবণতাকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে মালয়েশিয়া সরকার ২০২৬ সালে ৪৭ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক পর্যটক আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ‘ভিজিট মালয়েশিয়া ২০২৬ (VM2026)’ শীর্ষক প্রচারণার মাধ্যমে দেশটিকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপনের পরিকল্পনা করছে সরকার।
উপ-প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ড. আহমেদ জাহিদ হামিদি জানান, শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং, আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব এবং ইকোট্যুরিজম ও শপিং ট্যুরিজম খাতে বিশেষ জোর দেওয়া হবে।
তার ভাষ্য, ২০২৪ সালে মালয়েশিয়া ৩৮ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক পর্যটককে স্বাগত জানিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩১.১% বেশি।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কয়েক লাখ ভ্রমণকারী মালয়েশিয়ায় যান। এদের অনেকেই পরিবারভিত্তিক ভ্রমণ বা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যান। বাংলাদেশি ট্রাভেল এজেন্ট মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হলে বাংলাদেশ থেকে পর্যটকের সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। চিকিৎসা পর্যটনে মালয়েশিয়া বাংলাদেশিদের শীর্ষ পছন্দ।’
পর্যটন বিশেষজ্ঞ ড. লিম কিম হক মনে করেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো মালয়েশিয়ার জন্য বড় বাজার।
তার মতে, ‘শুধু আকর্ষণীয় স্থান নয়, সংস্কৃতি ও মানুষের আন্তরিকতাকে তুলে ধরতে পারলে বাংলাদেশি ভ্রমণকারীরা আরও বেশি আসবেন।’
সম্প্রতি ৫- ৭ সেপ্টেম্বর কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত তিন দিনের MATTA ফেয়ার ভিজিট মালয়েশিয়া ২০২৬ প্রচারণার আগাম স্বাদ দিয়েছে। এতে প্রায় দেড় লাখ দর্শনার্থী অংশ নেন।
পর্যটন মন্ত্রী দাতুক সেরি টিওং কিং সিং বলেন, ‘আমরা চাই মালয়েশিয়াকে টেকসই পর্যটন ও সংস্কৃতির অভিজ্ঞতার কেন্দ্রে পরিণত করতে। আজকের ভ্রমণকারীরা পরিবেশবান্ধব ও অর্থবহ অভিজ্ঞতা খোঁজেন।’
২০২৫ সালের প্রথমার্ধেই আন্তর্জাতিক পর্যটন ১৭.৯% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ পর্যটনও নতুন রেকর্ড গড়েছে। হোটেল, রেস্তোরাঁ ও খুচরা বাজারে ব্যবসায়ীরা তাই নতুন আশাবাদী।
MATTA সভাপতি নাইজেল ওং বলেন, ‘নতুন উদ্ভাবন, বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা এবং সরকারের প্রতিশ্রুতি- সব মিলিয়ে ভিজিট মালয়েশিয়া ২০২৬ বিশ্বকে মুগ্ধ করবে।’
বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্যও মালয়েশিয়া কেবল ভ্রমণের নয়, কেনাকাটা, চিকিৎসা ও পারিবারিক অবকাশযাপনের এক নিরাপদ ও সংস্কৃতিময় গন্তব্য হিসেবে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।