ভোটারের আস্থা ফিরাতে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নির্বাচন থেকে সরানো প্রয়োজন-বিএনপি
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:২৮
ছবি: সংগৃহীত।
প্রশাসন ও সরকারি বিতর্কিত কর্মকর্তারা যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে না পারেন- সে বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি। মঈন খান বলেন, নির্বাচন কমিশনও বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন এবং সতর্ক থাকার আশ্বাস দিয়েছে।
আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘গত ১৫ বছরে প্রশাসনকে একটি রাজনৈতিক দলের অনুগতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। এর ফলেই বিগত তিনটি নির্বাচনে ভোটাররা প্রহসনের শিকার হয়েছেন- যা সবাই জানে। এই বাস্তবতায় কমিশনকে সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনো বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত না হতে পারেন। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অতীতের সব প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। তবে যাঁরা আগে ভয় বা চাপের কারণে অন্যায় করেছেন, তাঁদের এখন গণতান্ত্রিক চেতনায় দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক- তারা বুঝতে পারলে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, সেটি এক উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য কোনো দলীয় বা ব্যক্তিগত নয়- এটি জাতীয় স্বার্থের প্রশ্ন। ১৭ বছরের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পর, বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় আমরা চাই, দেশে এমন একটি পরিবেশ তৈরি হোক যেখানে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবেন এবং ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান করেছি যেন তারা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, যাতে দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বুঝতে পারে- বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে এগোচ্ছে।’
তিনি মনে করেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তবে কমিশনের নিজস্ব জনবল সীমিত হওয়ায় প্রায় ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র ও তিন লাখ বুথে নির্বাচন পরিচালনায় সরকারের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগের সহযোগিতা প্রয়োজন। ‘এই বিশাল কাঠামো নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে কি না, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন,’ বলেন মঈন খান।
তিনি আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে এমনভাবে ভূমিকা নিতে হবে যাতে জনগণ বিশ্বাস করে যে তাদের কোনো দলীয় স্বার্থ নেই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি দৃশ্যমানভাবে নিরপেক্ষতার বার্তা দিতে পারে, তাহলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ তৈরি হবে।’
বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনী সংস্কার-সংক্রান্ত প্রস্তাব ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেই প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে যদি কমিশন প্রয়োজনীয় সুপারিশ বাস্তবায়ন করে, তাহলে আসন্ন নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এক মাইলফলক হবে।’
শেষে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই এই নির্বাচন জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনুক, যাতে বিশ্ব দেখতে পায়- বাংলাদেশ সত্যিই গণতন্ত্রের পথে ফিরছে।’
বৈঠকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং সাবেক সচিব মোহাম্মদ জকরিয়াও উপস্থিত ছিলেন।
