মৃদঙ্গের তালে, নৃত্যের ছন্দে মহারাসলীলা ঘিরে উৎসবের আমেজ
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৫৯
                                                            ছবি: সংগৃহীত।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মণিপুরি অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে এখন উৎসবের আমেজ। মৃদঙ্গের তালে, গানের সুরে ও নৃত্যের ছন্দে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। আসছে মণিপুরিদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব মহারাসলীলা। এ উৎসব ঘিরে প্রতিদিন চলছে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য এবং মহারাস নৃত্যের মহড়া। ভক্তি, আনন্দ আর ঐতিহ্যের মিশেলে এক অনন্য আয়োজন মহারাসলীলা। এ উৎসব কেন্দ্র করে বইছে আনন্দের হাওয়া।
আসছে ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব মহারাসপূর্ণিমা। এ উপলক্ষে কমলগঞ্জের মাধবপুর ও আদমপুর এলাকায় দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন মণিপুরি নৃত্যশিল্পীরা। প্রতিবছরের মতো এবারও উপজেলায় পৃথক দুটি গ্রামে মহারাস উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। মাধবপুরের জোড়া মণ্ডপে বিষ্ণুপ্রিয়া (মণিপুরি) সম্প্রদায়ের ১৮৩তম এবং আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মীতৈ (মণিপুরি) সম্প্রদায়ের ৪০তম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছরের মতো এবারও এই উৎসব দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে কয়েক হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র প্রথম এই রাসমেলার প্রচলন করেন। মণিপুরের বাইরে প্রথম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ১৮৪২ সালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুরে।
উৎসবের দিন সকালে অনুষ্ঠিত হয় 'গোষ্ঠলীলা' বা 'রাখাল নৃত্য, যা চলে গোধূলি পর্যন্ত। রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয় রাস উৎসবের মূল পর্ব শ্রীশ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত নৃত্যশিল্পীরা গীত ও নৃত্যের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণবন্দনায় ভোর পর্যন্ত মেতে থাকেন।
গেলো বৃহস্পতিবার বিকেলে কমলগঞ্জের মাধবপুর, মাঝেরগাঁও, শিমুলতলা ও আদমপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুই সপ্তাহ ধরে সেখানে চলছে মহারাস উৎসবের মহড়া। প্রশিক্ষকেরা মণিপুরি ছেলেমেয়েদের নৃত্যের বিভিন্ন কৌশল ও নিয়ম শেখাচ্ছেন।
মহড়ায় অংশ নেওয়া নৃত্যশিল্পী নিশামনি সিনহা বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই মণিপুরি নৃত্য দেখে বড় হয়েছি। মহারাস উৎসব আমাদের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান। এতে অংশ নিতে আমরা অনেক প্রস্তুতি নিই। রাসধারী আমাদের সবকিছু শেখান। পরিবার থেকেও অনেক উৎসাহ পাই। এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরি।'
প্রশিক্ষক সজল কুমার সিনহা বলেন, প্রতিবছরই আমরা শিশু- কিশোরদের নিয়ে এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করি। কেউ নতুন, কেউ অভিজ্ঞ-সবাই একসঙ্গে নাচের মহড়া দেয়। এখন প্রায় শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে।
                        
                        