https://www.emjanews.com/

10039

entertainment

প্রকাশিত

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৩৬

আপডেট

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:৩১

বিনোদন

মঞ্চ নাটক

সিলেটের মঞ্চে ‘টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান’: ন্যায়বিচার ও মানবতার বার্তা

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৩৬

ছবি: সংগৃহীত।

বিশ্ববিখ্যাত নাটক ‘টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান’-এর বাংলা অনুবাদিত সংস্করণ গতকাল সিলেটের কবি নজরুল অডিটরিয়ামে মঞ্চস্থ হয়েছে। আমেরিকান লেখক রেজিনাল্ড রোজ রচিত ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঐন্দিলা মজুমদার কর্তৃক রূপান্তরিত দ্যা টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান মঞ্চে পরিবেশন করে রেপার্টরি দল চিহ্ন। অসম্ভব গরেমেও এসি বিহীন হলে নাটকটি দেখতে অডিটরিয়ামে এসেছিলেন অনেক দর্শক। 

কাহিনির শুরু আদালতের একটি জুরি রুমে। একজন তরুণকে তার বাবাকে খুনের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। মামলার রায় নির্ভর করছে বারোজন জুরি সদস্যের মতামতের ওপর। প্রথমে সবাই আসামিকে দোষী মনে করে, শুধু একজন জুরি দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি মনে করেন, মামলার প্রতিটি দিক আরেকবার যাচাই করা উচিত।

সেখান থেকেই শুরু হয় তীব্র বিতর্ক ও যুক্তি-তর্ক। সাক্ষীর বক্তব্যের অসঙ্গতি, হত্যার অস্ত্রের বিরলতা নিয়ে ভুল ধারণা, সময় ও পরিস্থিতির অমিল-সবকিছু একে একে উন্মোচিত হতে থাকে। ধীরে ধীরে জুরিরা বুঝতে পারেন, আসামির অপরাধ প্রমাণের মতো শক্ত প্রমাণ নেই। অবশেষে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়-যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ (reasonable doubt) বিদ্যমান, তাই আসামিকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়।

নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন আনোয়ার হোসেন রনি। তাঁর নিপুণ পরিচালনায় নাটকের প্রতিটি মুহূর্ত হয়েছে টানটান ও প্রাণবন্ত। অভিনয়শিল্পীদের সাবলীল সংলাপ, চরিত্রে মগ্ন হয়ে ওঠা, আলো-অন্ধকারের চমৎকার ব্যবহার-সব মিলিয়ে দর্শকরা নাটকটি উপভোগ করেছেন মুগ্ধ হয়ে। অডিটরিয়াম বারবার তালি আর উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়েছে।

নাটকটি শুধু বিনোদন নয়, দর্শকের জন্য ছিল এক গভীর শিক্ষা- ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আবেগ নয়, প্রয়োজন প্রমাণ ও যুক্তি। একজন মানুষের দৃঢ় অবস্থানও সমাজে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। পূর্বধারণা ও পক্ষপাত মানুষকে ভুল পথে নিতে পারে, তাই খোলা মনে সত্যকে যাচাই করা জরুরি। ধৈর্য, আলোচনা ও যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্তই ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথ দেখায়।

‘টুয়েলভ অ্যাংরি ম্যান’-এর এই মঞ্চায়ন সিলেটের নাট্যপ্রেমী দর্শকদের জন্য ছিল এক ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা। নাটক শেষে দর্শকের চোখেমুখে ছিল ভাবনার ছাপ। সবাই যেন মনে মনে উপলব্ধি করলেন-ন্যায় শুধু আদালতের ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি প্রতিটি মানুষের জীবন ও সমাজে সমানভাবে প্রযোজ্য।