ছবি: প্রতীকী
বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনে ‘অ্যাওয়ার্ড’ বা পুরস্কার এখন আর শিল্পীর কাজের স্বীকৃতি বা সম্মানের প্রতীক নয়; বরং এটি হয়ে উঠেছে টাকার খেলা। পৃষ্ঠপোষকতা, স্পন্সরশিপ ও টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অর্থপ্রদত্ত পুরস্কার এখন শোবিজের মূল চিত্র। প্রকৃত মেধাবী শিল্পী ও সফলরা প্রায়ই হিসাবের বাইরে থেকে যাচ্ছেন, আর অখ্যাত বা অযোগ্যরা টাকা দিয়ে হাতে নিয়ে ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছেন।
শোবিজ সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, অনেক আয়োজনে শিল্পীর নামের তালিকা প্রাথমিকভাবে সরাসরি বা ফোনে স্পন্সরশিপ প্যাকেজের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হয়। যোগ্য শিল্পীরা পুরস্কার পাবেন, এতে কোনো দ্বিমত নেই; তবে অযোগ্য বা বিতর্কিত ব্যক্তিদের হাতে ‘শ্রেষ্ঠ শিল্পী’ বা অন্যান্য পুরস্কার তুলে দেওয়াকে সামাজিকভাবে নিন্দিত বলে মনে করা হচ্ছে।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ও অভিনেতা মিশা সওদাগর বলেন, ‘বহু অ্যাওয়ার্ড আয়োজনের মান আমরা জানি না। আমাদের সমিতির শিল্পীদের সতর্ক করেছি, অনুষ্ঠানের মান যাচাই করা জরুরি।’
চিত্রনায়ক ওমর সানী অভিযোগ করেন, ‘অনেকেই অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার জন্য ৩০-৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দেন। এখনকার প্রায় ৮০ শতাংশ অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানই বাণিজ্য হয়ে গেছে।’
নাট্যনায়িকা জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি বলেন, ‘আমাকে পারফর্ম করতে বলা হয়। তারা বলে পারফর্ম করলে অ্যাওয়ার্ড পাব। কিন্তু এভাবে পুরস্কার পাওয়া মানে কাজের মূল্যায়ন হয়নি। তাই আমি এ ধরনের আয়োজনে খুব কমই যাই।’
চিত্রনায়িকা দিলারা হানিফ পূর্ণিমা আরও বলেন, ‘কারা আয়োজক, কারা পুরস্কার পাচ্ছে, তা চেনা নেই। যখন ডাক আসে, প্রশ্ন করি কেন অ্যাওয়ার্ড দিবেন, কোনো সদুত্তর দিতে পারে না।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমান বাণিজ্যিক অ্যাওয়ার্ড সংস্কৃতি না থামলে শিল্পীরা প্রকৃত মানদণ্ডে মূল্যায়িত হবেন না এবং ‘পেইড আইকন’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠবেন। এজন্য পুরস্কার ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ করা, বিচারিক প্রক্রিয়া প্রকাশ করা এবং নিয়মিত কাজের ভিত্তিতে সম্মান প্রদানের প্রয়োজন।
অবৈধভাবে পরিচালিত এসব আয়োজন শুধুমাত্র শিল্পীর সম্মান ক্ষুণ্ন করছে না, বরং দর্শক ও শিল্পীর মধ্যকার আস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করান, সম্মাননাপ্রাপ্ত ও আয়োজনকারী উভয়ের মধ্যে প্রকৃত পার্থক্য বজায় রাখা, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা এবং পৃষ্ঠপোষকশক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো জরুরি, যাতে ‘অ্যাওয়ার্ড’ প্রকৃত অর্থে সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
                        
                        