ছবি: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসেতুগুলোর অন্যতম হংকং–ঝুহাই–মাকাও সেতু
বিশ্বের বৃহত্তম স্থাপত্য ও প্রকৌশল কৃতিত্বের একটি- হংকং-ঝুহাই-মাকাও সেতু সম্প্রতি আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে। ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুটি পার্ল নদী উপসাগরের উপর বিস্তৃত, যার নির্মাণে লেগেছে ৯ বছর এবং ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালে চালু হওয়ার পর থেকে সেতুটি শুধু যাতায়াতের মাধ্যম নয়, পর্যটকদের জন্যও এক আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রসংবাদ সংস্থা শিনহুয়ার তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত সেতু ব্যবহার করেছেন ৯৩ মিলিয়নেরও বেশি যাত্রী। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের অংশগ্রহণই ছিল সংখ্যাবৃদ্ধির প্রধান কারণ। ফেরি, বাস কিংবা ওয়াটারফ্রন্ট থেকে তোলা সেতুর ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে ট্রেন্ড তৈরি করেছে।
পর্যটকরা জানিয়েছেন, সেতুর দুই পাশে সমুদ্রের প্রশস্ততা, নিচে চলাচলরত জাহাজ আর শান্ত পরিবেশ- সব মিলিয়ে এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়।
ইন্দোনেশিয়ার একজন পর্যটক জানান, সেতুর দৃশ্য মনে রাখার মতো। আর জাকার্তার সেলিব্রিটি ফটোগ্রাফার বুদি সন্তোসোর মতে, সন্ধ্যার পর রঙিন আলো সেতুকে অন্যরকম সৌন্দর্য দেয়, যা ফটোগ্রাফির জন্য আদর্শ।
হংকং, ঝুহাই ও মাকাওকে সংযুক্ত করা এই সেতু ভ্রমণকারীদের জন্য সহজে ব্যবহারযোগ্য।
গোল্ডেন শাটল বাস: ২৪ ঘণ্টা চলাচল করে; টিকিট ৬৫–৭০ হংকং ডলার।
ক্রস-বর্ডার কোচ: নির্দিষ্ট সময়সূচিতে হোটেল থেকে সরাসরি সংযোগ।
নিজস্ব গাড়ি: সীমিতভাবে অনুমোদন; অগ্রিম পারমিট অপরিহার্য।
সেতু অতিক্রম করতে তিনটি অঞ্চলের আলাদা ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করতে হয়।
অক্টোবর থেকে মার্চ- স্বচ্ছ আকাশ ও আরামদায়ক আবহাওয়ার কারণে ভ্রমণের জন্য সেরা সময়। সন্ধ্যার পর সেতু আলোকিত হয়, যা ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেয়।
এছাড়া হংকং ও ঝুহাই পোর্টের ভিউ পয়েন্ট, বোট ট্যুর এবং মাকাওর ঐতিহাসিক কেন্দ্র পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণ।
সেতুটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে ৪ লাখ টনের বেশি স্টিল, যা দিয়ে একাধিক আইফেল টাওয়ার তৈরি করা সম্ভব। এতে রয়েছে তিনটি কেবল-সাপোর্টেড ব্রিজ, বিস্তীর্ণ ভায়াডাক্ট, ৬.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রতল টানেল এবং চারটি কৃত্রিম দ্বীপ। টাইফুন, ভূমিকম্প ও ভারী সামুদ্রিক যানবাহনের চাপ সহ্য করার মতো করে সেতুটি নকশা করা হয়েছে।
সেতুতে পথচারী ও সাইকেলচালকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ড্রোন ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং আবহাওয়া খারাপ হলে যান চলাচল বন্ধ করা হয়।
হংকং–ঝুহাই–মাকাও সেতু শুধু তিন অঞ্চলের যোগাযোগ সহজ করেনি, বরং প্রকৌশল দক্ষতা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভ্রমণ–অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে এখন বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের জন্য এক অনন্য গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
