যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি-পাকিস্তানি শিক্ষার্থীর ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা ও স্থগিতাদেশ
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:৫১
ছবি: সংগৃহিত
যুক্তরাজ্যের কঠোর অভিবাসন নীতির প্রভাবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের ভর্তির আবেদন বাতিল ও স্থগিত করছে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। ভিসার অপব্যবহার ও আশ্রয় প্রার্থনার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো- এমন তথ্য জানায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের অন্তত ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় ‘উচ্চ ঝুঁকির’ দেশ হিসেবে চিহ্নিত বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে শিক্ষার্থী গ্রহণে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর চাপ বাড়ানো হয়েছে যাতে তারা প্রকৃত শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করতে পারে।
ভর্তিতে স্থগিতাদেশ দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- ইউনিভার্সিটি অব চেস্টার: পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি আগামী অটাম সেশন পর্যন্ত স্থগিত; ইউনিভার্সিটি অব উলভারহ্যাম্পটন: বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে স্নাতক পর্যায়ের ভর্তি বন্ধ; ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট লন্ডন: পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত; লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সান্ডারল্যান্ড ইউনিভার্সিটি, অক্সফোর্ড ব্রুকস, বিপিপিসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
সান্ডারল্যান্ড ও কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভর্তির আবেদন গ্রহণ বন্ধ, এবং হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভর্তি স্থগিত করেছে।
এছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠান সরাসরি নিষেধাজ্ঞা না দিলেও শিক্ষার্থীরা CAS লেটার পাচ্ছেন না, অথবা আবেদন গ্রহণ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বর কার্যকর হওয়া যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন ভিসা কমপ্লায়েন্স নীতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর কঠোর শর্ত আরোপ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ভিসা আবেদনের ৫%–এর বেশি বাতিল হলে স্পনসর লাইসেন্স কমে যেতে পারে, ভর্তি স্থগিত হতে পারে বা লাইসেন্স বাতিলও হতে পারে। আগে এই সীমা ছিল ১০%।
এই নীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সতর্ক হয়ে উঠেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়- এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের হার যথাক্রমে ২২% ও ১৮%।
হোম অফিস এই সময়ে যেসব ২৩,০৩৬টি ভিসা আবেদন নাকচ করেছে, তার অর্ধেকই বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীর।
পাশাপাশি, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিকদের আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
লাহোরভিত্তিক বিদেশে পড়াশোনা সহায়তা প্রতিষ্ঠান অ্যাডভান্স অ্যাডভাইজর্সের প্রতিষ্ঠাতা মরিয়ম আব্বাস বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই সিদ্ধান্ত প্রকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।’
যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল অ্যাডমিশনের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ ছাত্র ভিসায় গিয়ে কোর্স শেষ না করে আশ্রয় প্রার্থনা কিংবা ভিসার ক্যাটাগরি পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রাখা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচিত যুক্তরাজ্যের ছাত্র ভিসাকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার না করে ভিসার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।’
