শিরোনাম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের পর থমথমে পরিস্থিতি, জোবরা গ্রাম পুরুষশূন্য চবি ও বাকৃবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের মশালমিছিল খুলনায় রূপসা সেতুর বেজমেন্ট থেকে সাংবাদিকের মরদেহ উদ্ধার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষে দেড় হাজার শিক্ষার্থী আহত, গুরুতর আহত ১০ জুলাই গণঅভ্যুত্থান মামলায় শেখ হাসিনার বিচার শেষ পর্যায়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি ও জামায়াত কোম্পানীগঞ্জের ওসি বদলী, নতুন ওসি রতন শেখ হাঁস মারার জেরে সাইদুর হত্যা, মূল আসামি ইমরান গ্রেফতার কানাইঘাট সীমান্তে গুলিতে নিহত যুবকের লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ সৌদিতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার

https://www.emjanews.com/

8832

art-literature

প্রকাশিত

২৪ আগস্ট ২০২৫ ১৮:৪৮

আপডেট

২৫ আগস্ট ২০২৫ ০০:০৮

শিল্প সাহিত্য

ফকির দুর্ব্বিন শাহ: ভাটি বাংলার মরমি বাউল সাধক

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫ ১৮:৪৮

ফকির দুর্ব্বিন শাহ (ছবি: সংগৃহিত)।

বাংলা বাউল সঙ্গীতের ইতিহাসে ফকির দুর্ব্বিন শাহ এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ভাটি বাংলার এই লোকসংগীত সাধককে ভক্তরা ভালোবেসে ডাকেন ‘জ্ঞানের সাগর’। আধ্যাত্মিক সাধনা, মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও সহজ-সরল জীবনবোধকে সুরের মাধ্যমে প্রকাশ করেই তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলার লোকসংগীত ঐতিহ্যের অমূল্য সম্পদ।

দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনো পর্যন্ত ফকির দুর্ব্বিন শাহ কোনো রাষ্ট্রীয় বড় স্বীকৃতি পাননি। অথচ তাঁর গান আজও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অমূল্য সম্পদ হিসেবে বেঁচে আছে।

ফকির দুর্ব্বিন শাহ ১৯২১ সালের ২ নভেম্বর সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার নোয়ারাই গ্রামের তারামনি টিলায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সফাত আলী শাহ ছিলেন সুফি সাধক এবং মাতা হাসিনা বানু ছিলেন ধার্মিক পীরানী। শৈশবে মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও সঙ্গীতে তাঁর জ্ঞানের ভাণ্ডার ছিল অসীম। কৈশোর থেকেই গ্রামীণ আসরে গান গেয়ে জনমনে পরিচিতি লাভ করেন।

তিনি শুধু বাউল ছিলেন না; তিনি ছিলেন ’মালজুড়া গানের জনক’। তাঁর গানে প্রেম, ভক্তি, সমাজভাবনা, আধ্যাত্মিক সাধনা ও মানবতাবাদ মিলেমিশে গেছে। সাধারণ মানুষ সহজেই তাঁর গানের সঙ্গে একাত্ম হতে পারত।

তিনি প্রায় এক হাজারেরও বেশি গান রচনা করেছেন, যার মধ্যে প্রায় চার শতাধিক গ্রন্থাকারে প্রকাশিত। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা—

প্রেমসাগর পল্লীগীতি (১ম–৫ম খণ্ড)

পাক বঙ্গ ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ গীতি

দুর্ব্বিন শাহ সমগ্র

ফকির দুর্ব্বিন শাহ’র জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- নামাজ আমার হইল না আদায়, আমি জন্মে জন্মে অপরাধী তোমারই চরণে রে, সুখের নিশি প্রভাত হলো, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি অসংখ্য জাগরণী গান রচনা ও পরিবেশন করেছিলেন। অস্ত্র হাতে না নিলেও তাঁর গানই হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী মানুষের মানসিক অস্ত্র।

১৯৬৭ সালে লন্ডনে প্রবাসী বাঙালিদের আমন্ত্রণে তিনি শাহ আবদুল করিমের সঙ্গে গান পরিবেশন করেন। সেখানে তাঁকে দেওয়া হয় ’জ্ঞানের সাগর’ উপাধি। এছাড়া ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্র যুক্তি তক্কো আর গপ্পো (১৯৭৪)-তে তাঁর গাওয়া গান ব্যবহৃত হয়।

১৯৪৬ সালে তিনি সুরফা বেগমকে বিয়ে করেন। তিন পুত্রসন্তানের মধ্যে জীবিত আছেন কেবল কনিষ্ঠ পুত্র আলম শাহ। সহজ-সরল জীবনযাপনই ছিল তাঁর বৈশিষ্ট্য।

১৯৭৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁকে সমাহিত করা হয় ছাতকের ’দুর্ব্বিন টিলা’-য়। প্রতি বছর সেখানে ভক্তরা সমবেত হয়ে তাঁর গান ও দর্শন স্মরণ করেন।

লালন শাহ, হাসন রাজা ও শাহ আবদুল করিমের মতোই দুর্ব্বিন শাহ বাংলা লোকসঙ্গীতের ধারা সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর গান শুধু সুরের ঐশ্বর্যে নয়, বরং জীবনের গভীর দার্শনিক বার্তা বহন করে।