https://www.emjanews.com/

9010

sylhet

প্রকাশিত

২৯ আগস্ট ২০২৫ ১৯:৪২

আপডেট

২৯ আগস্ট ২০২৫ ২২:১৪

সিলেট

কোম্পানীগঞ্জে বালু লুটের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু, প্রথম দিনেই ২ শ্রমিকের কারাদণ্ড

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৫ ১৯:৪২

ছবি: সংগৃহিত।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ইজারা বহির্ভূত স্থান থেকে বোমা মেশিন, ড্রেজার ও লিস্টার মেশিন দিয়ে চলমান বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযানে নেমেছে উপজেলা প্রশাসন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে দুই শ্রমিককে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- উত্তর বুড়দেও গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে মিজান আহমেদ (৩০) ও শাহাব উদ্দিনের ছেলে মেরাজুল আলী (৩২)। তারা দু’জনেই সাধারণ বালু শ্রমিক। শুক্রবার (২৯ আগস্ট) সকাল ৬টার দিকে ধলাই নদীর ইজারাবহির্ভূত স্থান থেকে বালু তুলছিলেন তারা। এ সময় উপজেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে তাদের দণ্ড প্রদান করে।

এদিকে কোম্পানীগঞ্জের ধলাই ও পিয়াইন নদীতে শ্যালো ও পরিবেশ বিধ্বংসী ‘বোমা মেশিন’ বসিয়ে অবাধে চলছে বালু লুটপাট। প্রশাসনকে উপেক্ষা করে ইতোমধ্যে প্রায় ২ কোটির বেশি ঘনফুট বালু লুট করে স্তূপ আকারে মজুদ করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য ৭০ কোটি টাকারও বেশি। এসব বালু নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে এবং রাতের আঁধারে স্টিলবডি নৌকা দিয়ে পাচার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

এ বছরের মার্চ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে উপজেলার বুড়িডহর হাজী হাছন আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে লামনীগাঁও পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বসতবাড়ি, বিদ্যালয়, মসজিদ, কবরস্থান, ঈদগাহ, রাস্তা, ফসলি জমি ও শিমুলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প (গুচ্ছগ্রাম) এখন ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

উপজেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য জুয়েল আহমদ বলেন, ’অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে হাজী হাছন আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে এবং ফসলি জমিও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় আছে।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকার প্রভাবশালী মহলই এই বালু ব্যবসার মূল হোতা। ধলাই সেতুর নিচে বালু উত্তোলনের ঘটনায় আন্দোলনে নামলে বেরিয়ে আসে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার তথ্য। এতে সিলেট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আব্দুল অদুদ আলফু মিয়া, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতা ও বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হানিফ খন্দকার, উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির আজমান আলী, উপজেলা বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক উসমান খাঁ, শ্রমিক দলের সভাপতি আবুল বাশার বাদশা, ছাত্রলীগ নেতা সুমন, বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ অসংখ্য প্রভাবশালীর নাম উঠে এসেছে। তাদের তত্ত্বাবধানে নৌকা ও ট্রাকে করে বালু পাচার হচ্ছে ছাতকসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের ভেতর থেকেও নীরব সমর্থন পাচ্ছে এই অবৈধ ব্যবসা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী ফখরুল আহমেদ বলেন, ’পিয়াইন নদীতে বালু লুট দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের।’

তবে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বালু-পাথর লুটের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচিত হওয়ার পর থেকে সাংবাদিকদের ফোন এড়িয়ে চলছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বুড়িডহর, গুচ্ছগ্রাম ও লামনীগাঁওয়ের বাসিন্দারা জানান, রাতের আঁধারে নৌকা দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিন মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ’অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং যেকোনো মূল্যে এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করা হবে।’