https://www.emjanews.com/

9263

sylhet

প্রকাশিত

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৪৪

আপডেট

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৫১

সিলেট

রিকাবীবাজার ওসমানী মেডিকেল সড়কে তীব্র যানজট রোগীদের চরম ভোগান্তি

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৪৪

ছবি: ইমজা নিউজ

সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একমাত্র প্রধান সড়কে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তীব্র যানজট দেখা যায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, রোগী-পরিবার, সাধারণ পথচারী ও জরুরি গাড়ি একসঙ্গে চলাচল করতে গিয়ে ক্রমাগত সংকটে পড়ছেন।  
উপশহরের বাসিন্দা আসমা বেগম অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে রিকসায় আসেন। মধুশহীদ মাজারের কাছে যানজটে আটকে পড়ার পর তিনি রিকসা থেকে নেমে ছেলেকে বুকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হাসপাতালে পৌঁছান। তিনি বলেন, ‘ছেলের জন্য হাসপাতালে আসতে আসতে নিজেরই অসুস্থতা বেড়ে গেল, এই যানজটের কোনো প্রতিকার কি নেই?’
এ সময় এম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেও সাধারণ যানবাহনের মধ্যে আটকে কার্যকরভাবে চলতে পারছিল না। স্থানীয়রা জানান, এম্বুলেন্সও সাধারণ গাড়ির মতোই আটকা পড়ে। হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রোগীর নিরাপদ পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সীমিত ও অপরিকল্পিত পার্কিং। ল্যাবএইড, পপুলার ও অন্যান্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারের গাড়ি যত্রতত্র দাঁড়িয়ে রোগী ওঠানো-নামানোর কারণে সড়কে চাপ বেড়েছে। রোগী-পরিবার ও সাধারণ যানবাহনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রতিদিন এই রাস্তায় নিত্যসংকট দেখা দেয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সড়ক সংকীর্ণ এবং পার্কিংয়ের অভাবে রোগী পরিবহন ও জরুরি পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। সুবিদবাজারের ব্যবসায়ী আখলাকুর রহমান জানান, ‘নিজের প্রাইভেট কারে মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে আনি, কিন্তু পার্কিং নেই। গাড়ি অন্য জায়গায় রাখতে গিয়ে রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছে, এম্বুলেন্সও চলাচল করতে পারছে না।’
ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পার্কিং ব্যবস্থা উন্নত করার চেষ্টা চলছে। ল্যাবএইডের ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তা প্রশস্ত না হলে স্থায়ী সমাধান হবে না।’
কমফোর্ট মেডিকেল সার্ভিসেসের জেনারেল ম্যানেজার মনোরঞ্জন দেবনাথ বলেন, ‘আমাদের পার্কিং নেই, তবে চেষ্টা করছি পার্কিং এর ব্যবস্থা করার।’
পপুলার ডায়াগনস্টিক শাখা ব্যবস্থাপক মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘যানজটের জন্য শুধু আমাদের দোষারোপ করা যাবে না, জনসচেতনতার অভাবও বড় সমস্যা। সড়ক ব্যবস্থাপনাও উন্নত করতে হবে।’
সিলেট মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) রাখী রাণী দাস জানান, ‘জনবল সীমিত হলেও নিয়মিত টহল ও অবৈধ পার্কিং নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। তবে যানজট কমাতে জনসচেতনতার ওপর জোর দেওয়া বেশি জরুরী।’ 
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ‘৪০-৫০ বছরের পুরোনো রাস্তাটি দ্রুত প্রশস্তকরণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নিলে যানজট কমবে। নিয়মিত অভিযানও পরিচালনা করা হচ্ছে।’
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে সীমাহীন পার্কিং, অপরিকল্পিত যান চলাচল, সংকীর্ণ সড়ক এবং জরুরি পরিষেবার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব। স্থানীয়রা মনে করছেন, সড়ক প্রশস্তকরণ, আধুনিক পার্কিং ব্যবস্থা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমস্যা অনেকাংশে সমাধান সম্ভব। এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একমাত্র সড়কে এই সমস্যা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে, যা রোগী, হাসপাতাল কর্মকর্তা ও সাধারণ পথচারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।