নবীগঞ্জ
সোনালী আমনের ঘ্রাণে মাতোয়ারা কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৫ ২০:৩৭
ছবি: সংগৃহিত
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র বাতাসে এখন সোনালী আমন ধানের ঘ্রাণে মাতোয়ারা কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক। ইতোমধ্যে হাওরে ধান কাটা শুরু হয়ে শেষের পথে। পুরো মৌসুমে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সঙ্কট। ফলে কৃষকদের ভরসা এখন হারভেষ্টার মেশিনের উপর অনেকটাই। অগ্রহায়ণ মাসেই এ সোনালী ফসলের ধান উঠবে কৃষকের গোলায়। হেমন্তের আগমনে ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব চলছে পুরোদম।
উপজেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষক-কৃষাণীদের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখা দিয়েছে। ধানে ধানে ভরে গেছে মাঠ। যতদূর চোখ যায় মাঠে সোনালি ধানের শীষ। চারদিকে মৌ মৌ গন্ধে যেন আলোকিত সর্বত্র। এখন কৃষাণ-কৃষাণিরা গোলা, খলা, আঙ্গিনায় ধান শুকানোর কাজে মহাব্যস্ত।
নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে এ বছর। আগাম জাতের কিছু কিছু ধান পাকলেও ২০/২৫ দিনের মধ্যে আমন ধান পুরোদমে কাটা-মাড়াই শেষ হবে। আমন ধানের ফলন ভালো হওয়ায় আশায় বুক বাঁধছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে হাটবাজারের ধানের দোকান নতুন ধান উঠে বেচাকেনা শুরু করেছে । বর্তমানে ধানের দামও ভালো। তাছাড়া আগাম ধান কাটার পর আবার একই জমিতে সরিষা চাষ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
সিলেট অঞ্চলে প্রথা রয়েছে, আশ্বিন-কার্তিক মাস অনেকটা অভাব অনটনের মাস। এ সময় কৃষকের ঘরে খাবার থাকে না, থাকে না শ্রমিকের মজুরি। হাজার হাজার শ্রমিক ও কর্মজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েন এ সময়।
নবীগঞ্জের হাওরাঞ্চলের আশ্বিন-কার্তিক মাসে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বিআর-৩৩ নামে স্বল্পমেয়াদি ধান জাত আবিষ্কার করে। এর জীবনকাল ১০৫-১১০ দিন, যেখানে অন্যান্য জাতের ধানের জীবনকাল ১৪০-১৫০ দিন। এছাড়া কৃষকরা এই আমন মৌসুমে স্বল্পমেয়াদি হাইব্রিড ধানের চাষ করছেন। অনেকে একে বলেন অভাবের সময়ের ধান।
নবীগঞ্জের কৃষকরা এখন অনেকটাই সচেতন। আগাম আমন, আগাম আলু এবং আগাম বোরো কিংবা ভুট্টা, ডালসহ নানা শস্যবিন্যাসকে কাজে লাগিয়ে কৃষকরা এখন অনেক অগ্রগামী।
নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১৩ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড আমন ধান লাগানো হয়েছে। শুধু বিআর-৩৩ লাগানো হয়েছে ২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে, হাইব্রিড লাগানো হয়েছে ৫০০ হেক্টরে, বিনা-৭ লাগানো হয়েছে ৩০০ হেক্টরে। তাছাড়া রয়েছে বিআর-৩৯ ও ৪০ জাতের আগাম ধান।
নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ ফজলুল হক মনি জানান, কৃষকদের মাঝে আগাম ফসল উৎপাদনে সচেতনতা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকরা এখন অল্প খরচে বেশি লাভ করতে চান। তাছাড়া আশ্বিন-কার্তিক মাসে ফসল উঠলে কর্মসংস্থানের ও সৃষ্টি হয়। এছাড়া এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ফলন হয়েছে।
সারাদেশের মতো নবীগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা ও এ বছরের বাম্পার ফলনে তারা অনেকটাই খুশি। প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ মানুযের বসবাস নবীগঞ্জ উপজেলার মানুষের খাদ্যের মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে ধান রপ্তানি করা যাবে বলে সুত্রে জানা যায়।
