https://www.emjanews.com/

6422

opinion

প্রকাশিত

২০ জুন ২০২৫ ১৭:৩৫

মতামত

সংস্কৃতি

সিলেটের সংস্কৃতি চর্চা: রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যতের পথচলা

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫ ১৭:৩৫

নৃত্যশৈলী সিলেটের ফেইসবুক থেকে

সিলেট বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক অঞ্চল, যার রয়েছে সমৃদ্ধ ভাষাগত, সংগীত ও লোকজ ঐতিহ্য। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক অমনোযোগ এবং সাংস্কৃতিক খাতে বিনিয়োগের ঘাটতির ফলে সিলেটের সংস্কৃতি চর্চা নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

সিলেটি ভাষা, গান, সাহিত্য এবং রান্না-বান্না এখনো অনেকের নিকট পরিচিত এবং প্রিয়। নাগরী লিপির চর্চা বর্তমানে সীমিত হলেও তা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি। লোকসংস্কৃতি ও গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী কর্মকাণ্ড অনেকাংশেই স্থানীয় মানুষের আগ্রহে টিকে আছে। সিলেটের নাট্যকর্মী, সংগীতশিল্পী এবং সাহিত্যিকরা ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে সংস্কৃতি চর্চায় অবদান রেখে চলেছেন।

তবে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের মাঝে সমন্বয়ের অভাব এবং সংস্কৃতি চর্চায় অগ্রাধিকার না দেওয়া এর অন্যতম প্রধান কারণ। উৎসব বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অনুমতি পেতে হয়রানি, অর্থনৈতিক সহায়তা না থাকা, এবং কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তি। 
এগুলো সংস্কৃতিচর্চায় নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করছে। অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত না থাকায় সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণও কমে যাচ্ছে।

এছাড়া আধুনিক মিডিয়া ও প্রযুক্তির প্রভাবে তরুণ প্রজন্মের মাঝে লোকজ সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। প্রশাসনিকভাবে সংস্কৃতি সংরক্ষণে কার্যকর নীতিমালা না থাকায় এবং স্থানীয় সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতা সমস্যাকে আরও গভীর করছে।

এই অবস্থায়, সংস্কৃতি চর্চাকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সমন্বিত ও অরাজনৈতিক উদ্যোগ। প্রথমত, স্থানীয় ও জাতীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংস্কৃতিচর্চায় স্বচ্ছ ও নিয়মিত অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়ত  সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দ জরুরি। তৃতীয়ত, তরুণ প্রজন্মের মাঝে লোকসংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে পাঠ্যবইয়ে স্থানীয় ঐতিহ্য অন্তর্ভুক্ত করা এবং বিদ্যালয় পর্যায়ে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বাড়ানো উচিত।

সবশেষে, একটি স্বাধীন, অরাজনৈতিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ তৈরি করতে পারলেই সিলেটের শতাব্দী পুরোনো ঐতিহ্য আধুনিক সময়েও টিকে থাকবে, সমৃদ্ধ হবে এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য গর্বের উৎস হয়ে উঠবে।