শিরোনাম
মঙ্গলবার সকাল থেকে সিলেটে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি নির্বাচন যত দেরি হবে, বাংলাদেশ ততই পেছাবে: সিলেটে মির্জা ফখরুল আলবদর রাজাকারবাহিনী একেক সময় একেক কথা বলছে: হাসান মাহমুদ টুকু বেগম জিয়া‌কে স্লো পয়জ‌নিং ক‌রে হ.ত্যা কর‌তেই গ্রেপ্তার ক‌রে‌ছিল আওয়ামী লীগ: মির্জা আব্বাস জেলা ও মহানগর বিএনপির মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন; আশাবাদ মির্জা ফখরু‌লের বিএনপির মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে পৌঁছেছেন পরিবহন ধর্মঘটে ভাঙ্গন: মঙ্গলবার জামায়াতপন্থী মালিকদের গা‌ড়ি চল‌বে জাফলং এর অবৈধ বালু আটক করলেন গ্রামবাসী, ছাড়ালেন প্রশাসন! ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট গড়ালো ৭২ ঘন্টায়

https://www.emjanews.com/

6962

sylhet

প্রকাশিত

০৬ জুলাই ২০২৫ ১৮:৩২

আপডেট

০৬ জুলাই ২০২৫ ২০:১৭

সিলেট

জাফলং এর অবৈধ বালু আটক করলেন গ্রামবাসী, ছাড়ালেন প্রশাসন!

প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে : জেলা প্রশাসক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫ ১৮:৩২

প্রশাসনের অভিযান ( ছবি- সংগ্রহ)

সিলেটের গোয়াইনঘাটে ইজারা বহির্ভূত ইসিএ এলাকা থেকে বালু লুটপাট থামাতে তেমন উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। বরং যারা এর প্রতিবাদ করছে, তাদের বিরুদ্ধেই যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছে স্থানীয় প্রশাসন, এমন অভিযোগ লেঙ্গুড়া গ্রামবাসীর। যদিও সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ বলছেন, যারা এই প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সুষ্পষ্ট অভিযোগ পেয়েই অভিযান চালানো হয়েছে। তবে যদি এসব বালু অবৈধভাবে তোলা হয়, সে বিষয়টি তদন্তের জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার লেঙ্গুড়া বালুমহাল ইজারা দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত লেঙ্গুড়া থেকে কোনো বালু উত্তোলন হয়নি। ইজারার আগে থেকেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হয় প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরের ইসিএ এলাকা; জাফলং, বাংলাবাজার, মুকতলা, বালির হাওর এলাকা থেকে। রাতের আধারে জাফলং থেকে ছোট ও বড় নৌকায় বালি তুলে নিয়ে আসা হয়। পাশাপাশি গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত নদীর তীর কেটে, ড্রেজার লাগিয়ে ইজারা বহির্ভূত এলাকাগুলো থেকে কয়েক কোটি ঘনফুট বালি সেখানে স্তুপ করে রাখা হয়।

গত এপ্রিলে সারি-১ ও লেঙ্গুড়া বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। এর পরই আরও ব্যাপকভাবে শুরু হয় ইজারা বহির্ভূত স্থান থেকে বালু উত্তোলন। ইজারাদার হিসেবে যাদের লাইসেন্স ব্যবহার করা হয়, তারা নেই দৃশ্যপটে। পুরো বিষয়টি সামলাচ্ছেন বিএনপি নেতা স্ট্যালিন থারিয়াং, যুবদল নেতা সাত্তার, জিয়ারত ও জাহিদ খান। বহিষ্কৃত যুবদল নেতা জাহিদ খান হলেন দুই উপদেষ্টার গাড়ি আটকে বিক্ষোভের মামলায় প্রধান আসামি। ইজারাদারের পক্ষে তাদের নেতৃত্বেই গোয়াইনঘাট উপজেলা কমপ্লেক্স থেকে ২০০ মিটার দূরে স্থানীয় কালামিয়া ঘাটে বসানো হয়েছে অবৈধ রয়েলটি ঘাট, যেখানে বসে ইসিএ এলাকা থেকে আসা অবৈধ বালুবোঝাই বলগেট ও নৌকা থেকে রয়েলটির নামে প্রতি ঘনফুট বালিতে অবৈধভাবে রয়েলটি আদায় করেন তারা।

একদিকে ইজারা নীতিমালায় এমনভাবে অর্থ আদায়ের কোনো সুযোগ নেই, অন্যদিকে তাদের ইজারাকৃত স্থান অর্ধ কিলোমিটার ভাটিতে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বছরই ইজারাদাররা লেঙ্গুড়া বালুমহাল ইজারার নামে মূলত ১০ কিলোমিটার উজানের ইসিএ এলাকাগুলো থেকে বালু উত্তোলনের অবৈধ লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহার করেন। প্রকৃতপক্ষে লেঙ্গুড়া থেকে কেউ বালু উত্তোলন করেন না। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে প্রতিদিন অবৈধ বালু থেকে কয়েক লাখ টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে, কিন্তু দেখার কেউ নেই।


চাঁদাবাজি বন্ধ ও নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলনের অভিযোগে স্থানীয়ভাবে ‘নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন আন্দোলন করে আসছে। নেতৃত্বে আছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবিদার লেঙ্গুড়া গ্রামের আজমল হোসেন। সম্প্রতি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জাফলং পরিদর্শনে এলে, তার কাছে লিখিত অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি।

আজমল হোসেনের অভিযোগ, সে প্রতিবাদ করার কারণে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে উল্টো চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু সব স্থানেই সে হাজির হয়ে তার অবস্থান তুলে ধরেন। সবশেষ গত ২৯ জুন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে তার গ্রামের যেখানে ভাঙন তৈরি হয়েছে, সেখানে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে শতাধিক বালুবোঝাই নৌকা আটক করে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন এসব নৌকা জব্দ না করে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে ইজারাদারের লোকজন নৌকায় থাকা শ্রমিকদের গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে উসকে দেয়।

নৌকা আটকের ৭ দিনের মাথায় যা ঘটলো:
গ্রামবাসীদের আটককৃত অবৈধ বালুবোঝাই নৌকাগুলো ছাড়িয়ে নিতে রোববার দুপুর ১২টার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারীর নেতৃত্বে শুরু হয় বিশেষ অভিযান। অভিযানে সেনা সদস্যসহ পুলিশের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। অভিযানের সময় নদীর মাঝপথে শতাধিক বালুবোঝাই বলগেট নৌযান আটকে থাকতে দেখা যায়। অভিযানে ওইসব নৌযানের চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যখন লেঙ্গুড়া ও আশপাশের গ্রামের মানুষ সেখানে প্রতিবাদ জানায়। গ্রামবাসীর অভিযোগ, তাদের ছত্রভঙ্গ করতে যৌথবাহিনী লাঠিচার্জ করে।

এতে কয়েকজন গ্রামবাসী আহত হন। একটি নৌকা থেকে বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রও উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রামবাসীর অভিযোগ, এসব অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইজারাদারের লোকজন সেখানে এসেছিল অবৈধ বালুভর্তি নৌকা ছাড়াতে। এদিকে, এ অভিযানে নৌপথে চাঁদাবাজির অভিযোগে ৬ গ্রামবাসীকে আটক করেছে যৌথবাহিনী।

অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ জানান, যে কোনো কিছু আটকে রাখা বে-আইনি। এছাড়া যার নেতৃত্বে এই আন্দোলন হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে প্রতি ঘনফুট বালু থেকে ২ টাকা হারে চাঁদা দাবির লিখিত অভিযোগ করেছেন নৌকা মালিকরা। অভিযোগ পেয়েই মূলত অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গ্রামবাসী এসব বালু অবৈধভাবে উত্তোলনের অভিযোগ করেছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি ইতিমধ্যে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি কেউ যদি গ্রামের পাশ থেকে অথবা ইজারা বহির্ভূত স্থান থেকে বালু উত্তোলন করে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।