
ছবি: ইমজা নিউজ
বর্তমান সরকার ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনে যতই দেরি হবে, বাংলাদেশ ততই পেছাবে। দেশের বিচারব্যবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়বে, বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দেবে এবং সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তিনি বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনের আয়োজন করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা লড়াই করছি জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেয়েছি ঠিকই, তবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই এখনো চলছে। তরুণ নেতা তারেক রহমানকে সামনে রেখে আমরা নতুনভাবে এই সংগ্রাম শুরু করেছি।’
সোমবার সিলেটে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকের আয়োজনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফিরাত, বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভা এবং সিলেট জেলা বিএনপি আয়োজিত গত জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে সোমবার (৭ জুলাই) সকালে সিলেটে পৌঁছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সিলেটে পৌঁছেই হযরত শাহজালাল (রহঃ) ও হযরত শাহ পরান (রহঃ) এর মাজার জিয়ারত করেন তিনি। বেলা ১২টার দিকে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত দোয়া ও আলোচনা সভায় যোগ দেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, তাহসিনা রুশদীর লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, এম এ মালিক ও ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউস, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন ও মিফতাহ্ সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, আবুল কাহের চৌধুরী শামীম ও মিজানুর রহমান চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই গত ১৭ বছর ধরে দলের নেতাকর্মী ও জুলাই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাদের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘হাসিনা এমনি এমনি পালায়নি।’ তিনি বলেন, বহু দিনের সংগ্রাম, বহু মানুষের রক্ত, অনেক মায়ের কান্না ও বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে দেশ।
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলাম ঠিক আছে, করবোটা কী? এখন আমাদের লড়াই করতে হবে গণতান্ত্রিক লড়াই, অর্থাৎ এই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য লড়াই করতে হবে। যেখানে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, মানুষ ভোট দিতে পারবে, বেকার সমস্যা দূর হবে, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে, এই রকম একটি রাষ্ট্র আমরা চাই’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বন্ধুগণ, আমাদের এখন একটিই চাওয়া, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই। সে জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে ৩১ দফা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এই ৩১ দফার মধ্যেই রয়েছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন, যে স্বপ্ন আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের তরুণরা প্রস্তুত নতুন বাংলাদেশের জন্য। সেই নেতৃত্ব দিতে হবে বিএনপিকে। বিএনপির নেতৃত্বে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেখেছিলেন, বেগম খালেদা জিয়া যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন এবং বর্তমানে আমাদের তরুণ নেতৃত্ব তারেক রহমান সেই স্বপ্ন ধারণ করে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এতো সহজে এই স্বপ্ন পূরণ হবে না। শত্রু অনেক। বাধা দিতে চায়, আটকে দিতে চায়, সময় ক্ষেপণ করাতে চায়। কিন্তু আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। এসব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে যেতে হবে।’
এসময় বিএনপি মহাসচিব বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অন্যান্য দলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যত নির্বাচনের দেরি হবে, তত বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে। বিনিয়োগ আসবে না, বেকারত্ব বাড়বে, নারীরা আরও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে, মব সংস্কৃতি আরও বাড়বে, বিচার বিভাগ ভেঙে পড়বে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে। এ জন্য দরকার একটি নির্বাচিত সরকার, যে সরকারের পেছনে মানুষ আছে, জনগণের সমর্থন আছে ’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত সরকারের চেয়ে কোনো সরকার শক্তিশালী হতে পারে না।’
বক্তব্যের শেষ দিকে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূসকে ধন্যবাদ জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এসময় তিনি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন, মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে বলেন, যাতে মানুষ মনে করে বিএনপিই তাদের বন্ধু। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে বিএনপির দিকে মানুষ আঙুল তোলে।’
এরপর মির্জা ফখরুলসহ অতিথিরা যোগ দেন জেলা বিএনপি আয়োজিত জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে।