
ছবি: সংগৃহিত।
ভালোবাসা যখন গাঁথা থাকে আত্মার বন্ধনে, তখন মৃত্যুও থামাতে পারে না সেই সম্পর্কের গভীরতা। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁও গ্রামে এমনই এক হৃদয় ছোঁয়া ঘটনা ঘটেছে। যেখানে এক দাম্পত্যজুটি শুধু জীবন নয়, মৃত্যুকেও করেছেন একসাথে আলিঙ্গন।
রাউৎগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম রাউৎগাঁও এলাকার বাসিন্দা ওয়ারিছ মিয়া (৭৫) ও তাঁর স্ত্রী রিনা বেগম (৬৮) দীর্ঘ চার যুগেরও বেশি সময় একসাথে কাটিয়েছেন। সুখ-দুঃখের অসংখ্য অধ্যায় পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁদের দাম্পত্যজীবনের পরিণতি ঘটল এক সাথে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, কয়েকদিন আগে রিনা বেগম মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ এলাকায়। সেখানে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ভোররাতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
স্ত্রীর মৃত্যুর সংবাদটা যেন স্বামী ওয়ারিছ মিয়ার হৃদয় ছিন্ন করে দেয়। ফজরের নামাজের জন্য ওযু শেষে ঘরে ফিরে স্ত্রী মারা গেছেন এই দুঃসংবাদ শোনামাত্র তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয় চিকিৎসক এসে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওয়ারিছ মিয়া ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ, সদালাপী ও সমাজসেবামনস্ক মানুষ। তিনি রাউৎগাঁও হাফিজিয়া মাদরাসার পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় জামে মসজিদ কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন ধর্মচর্চায় নিবেদিত ও পারিবারিক দায়িত্বশীলতায় অটল।
এই দম্পতির মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। স্থানীয়দের মুখে মুখে শুধু একটি কথাই-‘ভালোবাসার এমন নিদর্শন আর দেখা যায় না।’
মঙ্গলবার বিকালে জানাযার নামাজ শেষে এই যুগলকে পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়। যেন মৃত্যুর পরও তাঁরা আলাদা না হন।
একসাথে মৃত্যু, পাশাপাশি কবর, এ যেন জীবনের অন্তিম অধ্যায়ে ভালোবাসার পরিপূর্ণতা। এ কাহিনী শুধুই এক দম্পতির মৃত্যুর নয়, এটি ভালোবাসার অমরতা, আত্মিক সম্পর্কের অন্তহীন যাত্রার এক অনন্য উদাহরণ।
রাউৎগাঁও গ্রামের এই দম্পতির বিদায় হয়তো আজ এক শোকাবহ দিন, তবে ভালোবাসার এই শেষ চিত্র গ্রামবাসীর মনে দীর্ঘদিন গেঁথে থাকবে, ভালোবাসা কখনো মরে না, যদি তা হয় হৃদয়ের গভীরতা থেকে উৎসারিত।