শিরোনাম
লুটপাটে হুমকির মুখে ধলাই সেতু, রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন নির্বাচন ভণ্ডুলে ষড়যন্ত্র করছে পরাজিত শক্তি: প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সুরমায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাঁচাতে জালিয়াতির অভিযোগ বিএনপির ব্যর্থ অন্তর্বর্তী সরকার তরুণদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে: মৌলভীবাজারে নাহিদ ইসলাম সুনামগেঞ্জে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় যুবক খু*ন র‍্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমনের বাবার ওপর হামলা থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার যুদ্ধ: এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সঙ্কট ৩ আগষ্ট ঢাকার সমাবেশ থেকেই জুলাই ঘোষণাপত্র আদায় করে নিবো: নাহিদ ইসলাম সিলেটে এনসিপি’র পদযাত্রা শেষ, সভা চলছে

https://www.emjanews.com/

7704

international

প্রকাশিত

২৬ জুলাই ২০২৫ ১৯:৪১

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫ ১৯:৪১

ফাইল ছবি

বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)।

২০২৪ সালের মে মাসে ঢাকায় সফর করে সরকার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের ভিত্তিতে সংস্থাটি একটি বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টটি ২০২৫ সালের জুলাই মাসে ইউএসসিআইআরএফ-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। এটি লিখেছেন সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক সীমা হাসান।

রিপোর্টে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে। এরপর আগস্টে সেনাবাহিনীর সমর্থনে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন।

নতুন সরকার রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কার প্রস্তাব করলেও ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষা এখনও সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশে কার্যকর প্রশাসন ছিল না। ওই সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর একাধিক হামলার খবর পাওয়া গেছে। হামলাগুলো আওয়ামী লীগের সমর্থক বা সদস্য ভেবে প্রতিশোধমূলকভাবে চালানো হয়।

ইউএসসিআইআরএফ জানায়, ৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত দেশে মোট ১,৭৬৯টি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১,২৩৪টি ছিল রাজনৈতিক, ২০টি সাম্প্রদায়িক এবং ১৬১টি ভুয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সংঘটিত।

তবে ওই সময়ে অনেক মুসলিম ছাত্র ও নাগরিক সংখ্যালঘু মালিকানাধীন দোকান ও উপাসনালয় পাহারা দিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।

নতুন সরকার একটি সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করে। কমিশনের সুপারিশে সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ বা ‘বহুত্ববাদ’ শব্দ অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিএনপি। দলটি প্রস্তাবিত শব্দের পরিবর্তে ‘আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা’ শব্দবন্ধ সংবিধানে যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী ও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল ‘ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি’ বা এনসিপি আংশিক সমর্থন জানিয়ে ‘বহুত্ববাদ’-এর পরিবর্তে বাংলা বিকল্প ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ ব্যবহারের পক্ষে মত দেয়।

২০২৪ সালের আগস্টে নারী সংস্কার কমিশন গঠনের পর ২০২৫ সালের মে মাসে কমিশন ৪৩৩টি সুপারিশ প্রদান করে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিক আইন চালুর প্রস্তাব, যা ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইনকে সম্পূরক করবে।

এই প্রস্তাবের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম বিক্ষোভ করে এবং কমিশনকে ‘ইসলামবিরোধী’ বলে আখ্যায়িত করে। সংগঠনটির নেতারা কমিশনের নারী সদস্যদের নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করে।

এই ঘটনায় ৬ নারী হেফাজতের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দেন। পরে সংগঠনটি ক্ষমা চায়।

এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একটি নারী ফুটবল ম্যাচ বাতিল করতে বাধ্য করে এবং নাদিরা ইয়াসমিন নামের এক নারী অধ্যাপককে হুমকির মুখে কলেজ থেকে বদলি হতে বাধ্য করা হয়।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে এখনো ব্লাসফেমি সংক্রান্ত ধারা (দণ্ডবিধির ১৯৫(এ)) বহাল রয়েছে, যেখানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ফৌজদারি অপরাধ।

২০২৩ সালের সাইবার সিকিউরিটি আইনে বলা হয়েছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন ডিজিটাল কনটেন্ট প্রকাশ করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

ইউএসসিআইআরএফ এসব আইন ও পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

তাদের মতে, সংবিধান সংস্কারে সংখ্যালঘুদের পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে এই সংস্কার দীর্ঘমেয়াদে বৈষম্য আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

রিপোর্টে বলা হয়, এই সন্ধিক্ষণে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই বাংলাদেশে ধর্মীয় সহনশীলতা এবং দীর্ঘমেয়াদী শান্তির চাবিকাঠি হতে পারে।