ডাকসু নির্বাচন ২০২৫: নতুন বাস্তবতায় নেতৃত্ব নির্বাচনের পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫ ১১:১৪

ছবি: সংগৃহিত।
গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দীর্ঘ ছয় বছর পর আয়োজিত হতে যাওয়া এ নির্বাচন ঘিরে রাজনীতিসচেতন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে আগামী ১৯ আগস্ট পর্যন্ত। ২৫ আগস্ট প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ।
বয়সসীমা থাকছে না, বাদ সান্ধ্যকালীন শিক্ষার্থী
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ছিল ৩০ বছর। এবার সেই সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ভোটার ও প্রার্থী হতে হলে শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন হতে হবে এবং আবাসিক হলে অবস্থানরত বা সংযুক্ত থাকতে হবে।
সান্ধ্যকালীন, এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, ভাষা ও সার্টিফিকেট কোর্সের শিক্ষার্থীরা প্রার্থী বা ভোটার হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। একইভাবে অধিভুক্ত কলেজ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরাও নির্বাচনের বাইরে থাকছেন।
এবার ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে
দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী এবার ডাকসু নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর বাইরে ছয়টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রগুলো হলো:
কার্জন হল পরীক্ষা কেন্দ্র - শহীদুল্লাহ, অমর একুশে, ফজলুল হক হল
শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র - জগন্নাথ, জহুরুল হক, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল
টিএসসি - রোকেয়া, শামসুন নাহার, সুফিয়া কামাল হল
ঢাবি ক্লাব কেন্দ্র - বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল
সিনেট ভবন - এ এফ রহমান, মুহসীন, বিজয় একাত্তর হল
উদয়ন স্কুল ও কলেজ - সূর্যসেন, জিয়াউর রহমান, শেখ মুজিব, জসীমউদ্দীন হল
ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রস্তুতি ও প্রার্থী আলোচনায় যাঁরা
তফসিল ঘোষণার পর থেকে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে প্রার্থী নির্ধারণ ও প্যানেল গঠনে আলোচনা শুরু হয়েছে। এবার অনেক সংগঠন দলীয় ভিত্তির বাইরে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে সম্মিলিত প্যানেল গঠনের চিন্তা করছে।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন:
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ: আবু বাকের মজুমদার, জাহিদ আহসান, তাহমিদ আল মুদ্দাসির, আবদুল কাদের
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: উমামা ফাতেমা
ঢাবি সাংবাদিক সমিতি: মহিউদ্দিন মুজাহিদ
ছাত্রদল: আবিদুল ইসলাম খান, বি এম কাওসার, তানভীর বারী হামিম
ছাত্র ইউনিয়ন: মেঘমল্লার বসু
ছাত্র মৈত্রী: জাবির আহমেদ
ছাত্রশিবির: আবু সাদিক কায়েম, এস এম ফরহাদ
ছাত্র অধিকার পরিষদ: বিন ইয়ামিন মোল্লা
এবারের নির্বাচনে মোট ২৮টি পদে নির্বাচন হবে। এর মধ্যে চারটি নতুন পদ (গবেষণা ও প্রকাশনা, ক্যারিয়ার উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ, মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক) যুক্ত করা হয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে মতামত ও বিতর্ক
ডাকসু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে নানা ছাত্রসংগঠন ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ছাত্রদল অভিযোগ করেছে, অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে এবং নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ নেতাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ছাত্র ইউনিয়ন অভিযোগ করেছে, অভ্যুত্থানের পর তারা যে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল, তা উপেক্ষা করে আগের কাঠামোতেই নির্বাচন হচ্ছে।
তবে নির্বাচন আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছে অনেক সংগঠন।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র মৈত্রীসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন একটি স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
দীর্ঘদিন পর ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ ও প্রত্যাশা উভয়ই রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী প্রার্থীরা এবার ভোটারদের কাছে বাড়তি গুরুত্ব পাবেন। নারী, সংখ্যালঘু, বিজ্ঞান অনুষদ ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট এবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও মত বিশ্লেষকদের।
ছাত্র নেতৃত্ব নির্বাচনের এ ঐতিহাসিক সুযোগ যেন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে পরিণত হয়-এটাই এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট মহলের মূল প্রত্যাশা।