
ছবি: সংগৃহীত।
সিলেটের বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদাপাথর’ থেকে লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে প্রশাসনের অভিযান শুরুর পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অভিযানের ভয়ে বিভিন্ন ক্রাশার মিল মালিক লুট করা পাথরের উপর বালু ও মাটি ফেলে তা আড়াল করার চেষ্টা করছেন।
শুক্রবার সকালে কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ঘাট থেকে সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল পর্যন্ত ক্রাশার মিল ও মজুদ এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা যায়। বুধবার রাতে অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অধিকাংশ ক্রাশার মিল বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ক্রাশার মিলের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। এতে অনেক মিল মালিক ও বালু-পাথর ব্যবসায়ীরা গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
ভোলাগঞ্জের ক্রাশার মিল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে-মিলের সামনে আমদানি করা পাথর রাখা হলেও পেছনের লুটের পাথর বালু দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে দ্রুত পাথর ভেঙে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে। সদর উপজেলার ধোপাগুল-লালবাগ ও শহীদ মিনার এলাকায় মিলের পাশে মাটি ফেলে পাথর ঢেকে রাখা হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও মিলকর্মীরা মুখ খুলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসিন্দা জানান, অভিযানের পর মিল মালিকরা বিপাকে পড়েছেন। সরকারি অভিযানকারী দলের চোখ এড়াতে বালু বা মাটির স্তূপের আড়ালে পাথর ঢেকে রাখা হচ্ছে। আরেক শ্রমিক জানান, কিছু পাথরকে পুরোনো বা কালচে দেখাতে মাটি ও বালু মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সিলেট সদর উপজেলার ইউএনও খোশনূর রুবাইয়াৎ বলেন, ‘আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। বালু-মাটি দিয়ে পাথর লুকানো হলেও উদ্ধার অভিযান চলবে। খবর পেয়েছি, বিভিন্ন বাড়িতেও পাথর লুকানো হচ্ছে।’কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইউএনও আজিজুন্নাহারও একই তথ্য দেন এবং লুকানো পাথর উদ্ধারের আশ্বাস দেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই সাদাপাথর এলাকায় শুরু হয় ব্যাপক লুটপাট। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয়ভাবে সব রাজনৈতিক দলের নেতারা এতে জড়িত ছিলেন। ধলাই নদীর উৎসমুখে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ পাথর দিনের বেলা প্রকাশ্যে নৌকায় করে সরিয়ে নেওয়া হয়। শত শত নৌকা দিয়ে প্রতিদিন পাথর পরিবহন করা হয়েছে, এমনকি নদীতীরের বালিও উত্তোলন করা হয়েছে।
স্থানীয় অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিএনপির ১৬ জন ও আওয়ামী লীগের ৫ জন নেতার নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আনা প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক এই লুটে অংশ নেয়। ইতোমধ্যে পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট সাত দিনের মধ্যে লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করে যথাস্থানে প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে লুটে জড়িতদের তালিকা আদালতে দাখিল করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে রিটটি করেন সরওয়ার আহাদ এবং শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।