ডাকসুতে শিবিরের বড় জয়, ফলাফল প্রত্যাখ্যান করল ছাত্রদল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৩৫
ছবি: সংগৃহীত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও সম্পাদকীয় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে জয় পেয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ প্রার্থীরা। তবে ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন ছাত্রদল ও কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে শিবিরের প্রার্থীদের জয়
ভিপি পদে শিবির সমর্থিত মো. আবু সাদিক কায়েম ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন ৩ হাজার ৮৮৩, উমামা ফাতেমা ৩ হাজার ৩৮৯, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থী আব্দুল কাদের ১ হাজার ১০৩ এবং প্রতিরোধ পর্ষদের তাসনিম আফরোজ ইমি পেয়েছেন ৬৮ ভোট।
জিএস পদে শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের শেখ তানভীর বারী হামিম পেয়েছেন ৫ হাজার ২৮৩ ভোট। এজিএস পদেও শিবিরের মুহা. মহিউদ্দিন খান ১১ হাজার ৭৭২ ভোটে জয়ী হন।
সম্পাদক পদে শিবিরের দাপট
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক, ক্রীড়া, পরিবহন, কমন রুম-ক্যাফেটেরিয়া, মানবাধিকার-আইন, স্বাস্থ্য-পরিবেশ এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদকসহ অন্তত ৯টি পদে জয় পেয়েছেন শিবির সমর্থিত প্রার্থীরা।
তবে সমাজসেবা সম্পাদক, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও গবেষণা-প্রকাশনা সম্পাদক পদে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
ফলাফল প্রত্যাখ্যান
ভোট গণনার মধ্যেই মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া দুইটার দিকে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম ফেসবুকে লিখেন, ‘পরিকল্পিত কারচুপির এই ফলাফল দুপুরের পরপরই অনুমান করেছি। নিজেদের মতো করে সংখ্যা বসিয়ে নিন। এই পরিকল্পিত প্রহসন প্রত্যাখ্যান করলাম।’
এর কিছুক্ষণ পর স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমাও ডাকসু বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি লেখেন, ‘বয়কট! বয়কট! ডাকসু বর্জন করলাম। শিবির পালিত প্রশাসনের নির্লজ্জ কারচুপি।’
ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিমও অনিয়মের অভিযোগ তুলে লেখেন, ভোট উৎসবমুখর হলেও গণনার সময় মেশিন ত্রুটি, জালিয়াতি ও কারচুপি ঘটেছে।
শান্তিপূর্ণ ভোটে কারচুপির অভিযোগ
এবার ডাকসুর ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী। ভোটার ছিলেন ৩৯ হাজার ৭৭৫ শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আটটি কেন্দ্রে ভোট হয়। প্রাথমিক হিসাবে ৭৮ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।
ভোট চলাকালে পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকলেও গণনার সময় নানা কেন্দ্রে প্রার্থীদের কারচুপির অভিযোগ ওঠে। রাত সাড়ে সাতটার পর থেকে টিএসসি কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদল ও শিবির কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
নির্বাচন কমিশনের মন্তব্য
বুধবার সকালে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এই ডাকসুর মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর মডেল সেট করতে পেরেছি। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় কলেজগুলোও এ অভিজ্ঞতা অনুসরণ করবে বলে আমরা আশা করি।’
