
ছবি: সংগ্রহ
আনিস রহমান: নব্বই দশকের ফুটবল উন্মাদনার কথা আজকের প্রজন্মের অনেকের কাছেই যেন রূপকথার মতো শোনায়। সেই সময়টায় দেশের অলিগলি কাঁপত ফুটবলের উত্তাপে। বাবা-চাচাদের মুখে শোনা গল্পগুলো যখন তারা বলেন, তখন অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না যে বাংলাদেশেও ফুটবলের এক গৌরবোজ্জ্বল অতীত ছিল। মাঠের দুর্বল পারফরম্যান্স দেখে প্রজন্মের অনেকে ধরে নিয়েছিল, দেশের ফুটবলের দিন বুঝি শেষ।
তবে সময় বদলেছে। আবারও ফিরছে সেই হারানো ঐতিহ্য। বাংলাদেশ ফুটবল আজ এক নতুন জাগরণে পা রেখেছে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রাখছেন দেশের গর্ব, ইউরোপিয়ান লিগ মাতানো সিলেটের রত্ন হামজা চৌধুরী। তাঁর হাত ধরে শুরু হয়েছে সাফল্যের যাত্রা। তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কানাডা জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার সামিত সোম এবং ইতালিতে খেলা ফাহমিদুল ইসলাম। আগে থেকেই আছেন তারেক কাজী, জামাল ভূঁইয়ার মতো অভিজ্ঞ ও নিবেদিতপ্রাণ খেলোয়াড়রা।
এই তারকাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা বাংলাদেশ ফুটবলে ফিরিয়ে এনেছে প্রাণ। ফুটবলের উত্থান যেন এখন ক্রিকেটকেও ম্লান করে দিয়েছে। প্রতিটি ম্যাচেই গ্যালারি উপচে পড়ছে দর্শকে। টিকিটের দাম তিন-চার গুণ বেশি হলেও সহজে মিলছে না। প্রীতি ম্যাচ হোক বা টুর্নামেন্ট—বাংলাদেশ দল মাঠে নামলেই গ্যালারিতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না।
অথচ কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ ফুটবল ছিল নিদারুণ দৈন্যদশায়। নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপের সঙ্গে ড্র করতেও লড়তে হতো। সেই জায়গা থেকে এই উত্তরণ মোটেই সহজ ছিল না।
ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়া ২০১৩ সালে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেকের মাধ্যমে এই পরিবর্তনের সূচনা করেন। উন্নত দেশের সুযোগ-সুবিধা ছেড়ে দেশের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে টেনে আনে বাংলাদেশে। তাঁর পথ ধরেই একে একে দলে যোগ দেন ফিনল্যান্ড প্রবাসী তারেক কাজী ও কানাডা প্রবাসী সৈয়দ শাহ কাজেম।
তাদের প্রচেষ্টায় দলের পারফরম্যান্স উন্নত হলেও বড় কোনো সাফল্য ধরা দেয়নি। অবশেষে হামজা চৌধুরী, সামিত সোম ও ফাহমিদুল ইসলামের আগমনে সেই গল্প নতুন মোড় নিচ্ছে। ফুটবল ভক্তরা এখন আশাবাদী—জামাল ভূঁইয়া ও তারেক কাজীদের দীর্ঘ শ্রম বৃথা যাবে না।
আসছে ১০ জুন বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে সিঙ্গাপুরের। এই ম্যাচ ঘিরে চলছে বিপুল উদ্দীপনা। ফুটবলপ্রেমীরা আশায় বুক বাঁধছেন—সিঙ্গাপুরকে পরাজিত করে বাংলাদেশ এবার এশিয়ার ফুটবল মানচিত্রে এক নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে। সোনালি অতীতকে ছাপিয়ে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।