চা কিনতে সা ব ধা ন
মনোরোম প্যাকেট আর কথার বাহারে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল চা পাতা, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫ ১৭:৪৫

শ্রীমঙ্গল শহরে চা বোর্ডের ভ্রাম্যমাণ আদালতে জব্দ ভেজাল চা।
ইএন রিপোর্ট : চায়ের শহর শ্রীমঙ্গল বা চায়ের দেশ সিলেট, সব জায়গাতেই পাওয়া যাচ্ছে ভেজাল চা পাতা। মনোরোম প্যাকেট আর কথার বাহারে যারা এসব চা পাতা কিনছেন, তারা আদতে পয়সা দিয়ে বিষ কিনছেন।
নিম্নমানের পরিত্যক্ত ভারতীয় চা পাতার সাথে রঙ মিশিয়ে তৈরি এসব চা পাতা আলাদা করে চেনা খুব সহজ নয়। ফলে সিলেট অঞ্চলে বেড়াতে আসা পর্যটকরাও চা পাতা কিনতে গিযে প্রতারিত হচ্ছেন।
এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে ভেজাল চা পাতা তৈরি ও বিক্রির অবৈধ কর্মকাণ্ড ঠেকাতে অভিযানে নেমেছে চা বোর্ডের ভ্রাম্যমাণ আদালত ।
শুক্রবার চা বোর্ডের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপসচিব সাবিনা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। অভিযানে হবিগঞ্জ রোডে অবস্থিত ‘গ্রীন লিফ টি ফ্যাক্টরি’ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি চা বোর্ডের বৈধ নিবন্ধন ছাড়াই গ্রিন টি উৎপাদন করছে। প্রতিষ্ঠানটিকে সিলগালা করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
একইদিনে সোনার বাংলা রোডে অবস্থিত ‘মেসার্স গাছপীর এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড টি হাউজ’ এ অভিযান চালিয়ে শাহীবাগ আবাসিক এলাকায় সংরক্ষিত ৭৫ বস্তা ভারতীয় সিডি চা (প্রতি বস্তা ৭০ কেজি) জব্দ করা হয়। অবৈধভাবে বিদেশি চা সংরক্ষণের অপরাধে জুবেল মিয়া নামক এক ব্যক্তিকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এসময় বিটিআরআই পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন, চা বোর্ডের সহকারী পরিচালক (বাণিজ্য) মোঃ আব্দুল্লাহ আল বোরহান, এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সেলিনা আক্তার সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মানহীন চা পাতা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন বিপজ্জনক। এতে করে সুনাম নষ্ট হচ্ছে দেশের চায়েরও।
চা বোর্ডের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপসচিব সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ভারতীয় চা পাতাগুলো মূলত ডাস্ট ক্যাটাগরির, একেবারে নিম্নমানের চা, যা সাধারণত ফেলে দেওয়ার মতো। অথচ এই নিম্নমানের চা আমাদের দেশের বাজারে ভালো মানের চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
আমাদের এই অভিযান শুরু হয়েছে পঞ্চগড় থেকে এবং আমরা একই ধরণের অভিযান বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে পরিচালনা করছি। শ্রীমঙ্গলে আমরা দেখেছি এ ধরনের প্রচুর অবৈধ চা ব্যবসা গড়ে উঠেছে, যা দেশের অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
আমরা বিগত তিনদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালাচ্ছি এবং ইতিমধ্যে আরও কিছু চা জব্দ করেছি, যেগুলো সরকার নির্ধারিত নিলামের বাইরে বেআইনিভাবে বাজারজাত করা হচ্ছিল। এর ফলে সরকার চা নিলাম থেকে রাজস্ব হারাচ্ছে। সরকারি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যত চা উৎপাদিত হয়, তার পুরোটাই বাগান ও ফ্যাক্টরিগুলো সরকারকে সঠিকভাবে দেখায় না এবং নিলামে তোলে না। অতি লাভের আশায় তারা এসব চা নিলামের বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
তিনি বলেন, ভারত থেকে নিম্নমানের চা অবৈধভাবে আমদানি করা হচ্ছে এবং তা বাংলাদেশের বাজারে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এই চাগুলো মানহীন হওয়ায় দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও বিপজ্জনক। আমরা চাই, বাংলাদেশের চা শিল্প রক্ষা পাক, আমাদের দেশের উৎপাদিত চায়ের মান উন্নত হোক এবং এই অবৈধ আমদানি ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে যেন আমাদের দেশের চা শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এজন্যই আমরা এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি এবং অভিযান অব্যাহত রাখব।