শিরোনাম
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতায় তরুণদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে-নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট নিয়ে সংঘ*র্ষে প্রা*ণ গেল যুবকের, আহ*ত ১ র‍্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমনের বাবার ওপর হামলা থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার যুদ্ধ: এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সঙ্কট ৩ আগষ্ট ঢাকার সমাবেশ থেকেই জুলাই ঘোষণাপত্র আদায় করে নিবো: নাহিদ ইসলাম সিলেটে এনসিপি’র পদযাত্রা শেষ, সভা চলছে এনসিপি'র নাহিদ ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের শাবিপ্রবিতে উষ্ণ অভ্যর্থনা আমরা ফিটনেসবিহীন রাষ্ট্র রেখে যেতে চাই না: নাহিদ ইসলাম দক্ষিন সুরমায় এম এ মালিকের আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে ছিলেন না সিলেট বিভাগের কোন পদধারী নেতা জুলাই যুদ্ধ শেষ হয়নি: হবিগঞ্জে নাহিদ ইসলাম

https://www.emjanews.com/

7503

opinion

মতামত

নিকট আত্মীয় থেকে রক্ত নিলে বিপদ! 

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫ ২১:২৫

ছবি: সংগৃহিত।

ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে আমাদের হাসপাতালে এসেছিলেন ষাটোর্ধ্ব এক শিক্ষক। নাম আব্দুল মতিন। বহুদিন ধরে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন আর ক্রনিক রেনাল ডিজিজে ভুগছেন। একদিন হঠাৎ করেই প্রচণ্ড দুর্বলতা, জ্বর আর মাথা ঘোরা শুরু হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর ধরা পড়ে তাঁর হিমোগ্লোবিন মাত্র ৫ গ্রাম। জরুরি রক্ত দরকার।
হাসপাতালে তৎপরতা শুরু হয়, কিন্তু ব্লাড ব্যাংকে উপযুক্ত রক্ত না পেয়ে তার বড় ছেলে নিজেই রক্ত দিলেন, সদ্য অফিস থেকে ছুটে এসেছেন, ছেলের মনে তখন শুধু একটাই চিন্তা, বাবা যেন বাঁচেন।
রক্ত দেওয়ার ৪ দিনের মাথায় আব্দুল মতিন সাহেবের শরীরে লালচে র‍্যাশ দেখা দেয়। এরপর শুরু হয় জ্বর, পাতলা পায়খানা, হিমোগ্লোবিন ও প্লাটিলেট আরও কমে যায়। দিন দিন অসুস্থতা বাড়ে। তাঁর চোখ-মুখে বিষণ্নতা, শরীর যেন নিঃশেষ।
হেমাটোলজি বিভাগের ডাক্তাররা দ্রুত বুঝতে পারেন-এটা TA-GVHD।
‘এখনও সময় আছে?’ – জিজ্ঞেস করেন মতিন সাহেবের স্ত্রী, কান্নাভেজা চোখে।
‘আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু...’– বাকিটুকু আর শেষ করেন না চিকিৎসক।
মাত্র ১২ দিনের মাথায় এই প্রবীণ শিক্ষক চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তাঁর মৃত্যুর কারণ ছিল এমন একটি জটিল রক্তজনিত রোগ, যার নাম অনেকেই জানেন না—Transfusion Associated Graft versus Host Disease।
এই ঘটনার ঠিক এক সপ্তাহ পর একই হাসপাতালে আরও দু’জন রোগী একই উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন। রক্ত দিয়েছিলেন তাঁদের ছেলেমেয়েরাই। চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন সবগুলো TA-GVHD।

TA-GVHD প্রতিরোধযোগ্য, কিন্তু মৃত্যুহার প্রায় শতভাগ।
প্রতিরোধই একমাত্র ভরসা।
এই হৃদয়বিদারক গল্প আমাদের একটি বার্তাই দেয়,
যখনই রক্ত লাগবে, ভেবে নিন বারবার।
নিজের ঘরের রক্ত নয়, নিরাপদ প্রক্রিয়ার রক্তই জীবন বাঁচায়।

TA-GVHD কেন হয়?
সাধারণত দাতার T- lymphocytes এর জন্য দায়ী। তার সাথে গ্রহীতার যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে (ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, দীর্ঘদিন ধরে কোন Immunosuppressive drugs খেলে) এবং নিকট আত্মীয়র রক্ত পরিসঞ্চালন করলে এই মারাত্মক রোগ হয়।

কি কি লক্ষ্মণ দেখা দেয়?
রক্ত পরিসঞ্চালনের ৩ দিন থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে যদি রোগীর ত্বকে Rash দেখা দেয়, সাথে রক্তের হিমোগ্লোবিন, শেত্ব কণিকা ও প্লাটিলেট কমে যায় (Pancytopenia), যকৃতে প্রদাহ যার ফলে জন্ডিস দেখা যায় ও লিভার এনজাইম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায় এবং ডায়রিয়া হয়। 

চিকিৎসা কি?
TA-GVHD হলে অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন এক মাত্র চিকিৎসা কিন্তু এই চিকিৎসার পরও রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক বেশি। 
তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। 

কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
১.অপ্রয়োজনীয় রক্ত পরিসঞ্চালন না করা, কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা করা।
২. নিকট আত্মীয় দাতা না হওয়া। 
৩. যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের রক্ত পরিসঞ্চালনের প্রয়োজন হলে লিউকোফিল্টার ব্যবহার ও Irradiated blood পরিসঞ্চালন করা।

লেখক: ডা. আবু ইউসুফ মো. নাজিম 
সহকারী অধ্যাপক, হেমাটোলজি বিভাগ
নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট