রাষ্ট্রীয় মূলনীতি সংশোধনে দ্বিধাবিভক্ত রাজনৈতিক দলগুলো, আপত্তি বাম চার দলের
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫ ২২:৩৭

ছবি: সংগৃহিত।
সংবিধানের মূলনীতি সংশোধনের প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’- এই ছয়টি মূল্যবোধকে নতুন করে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে একমত হয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও এলডিপিসহ বেশ কয়েকটি দল।
তবে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে বামপন্থি চারটি দল- কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ।
রোববার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সংলাপে এই অবস্থান তুলে ধরে দলগুলো। এটি রাষ্ট্র সংস্কার কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৯তম দিন ছিল।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'মূলনীতির প্রশ্নে ঐকমত্য সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধানে যেসব মূলনীতি ছিল- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- তা পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত থাকলে আমরা আলোচনায় থাকতে পারি না।'
তিনি আরও বলেন, '৭২-এর সংবিধানের মূল চার নীতি সংরক্ষণ করেই প্রয়োজনে নতুন কিছু সংযোজন করা যেতে পারে, কিন্তু বাদ দেওয়া চলবে না।'
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'কমিশনের প্রস্তাবই আমাদের প্রস্তাব। কোনো আপত্তি নেই।'
জামায়াতে ইসলামী প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য না দিলেও বিভিন্ন সূত্র জানায়, তারাও প্রস্তাবিত নতুন মূলনীতির সঙ্গে একমত।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, 'আমরা অতীতের বিতর্কে যেতে চাই না। কমিশনের প্রস্তাবেই আমরা একমত। আগে যা ছিল, তা পুরোপুরি বাতিল হওয়া উচিত।'
বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, "সমাজতন্ত্র এখন আন্তর্জাতিকভাবে পরিত্যক্ত। কমিশনের প্রস্তাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকায় ‘আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা’ যুক্ত করার দাবি থেকেও আমরা সরে এসেছি।”
এলডিপি নেতা আবুল হাসান রুবেল বলেন, '৭২-এর বিতর্কিত ধ্যানধারণা বাদ দিয়ে কমিশন এক অন্তর্ভুক্তিমূলক, মানবিক এবং ন্যায়ভিত্তিক মূলনীতি প্রস্তাব করেছে। আমরা সেটিকে স্বাগত জানাই।'
কমিশনের এই প্রস্তাবে অধিকাংশ দলের সমর্থন থাকলেও বাম দলগুলোর তীব্র আপত্তির কারণে সংলাপ জটিল আকার নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষত আদর্শিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ঘিরে রাজনৈতিক বিভাজন নতুন করে সামনে চলে এসেছে।
রাষ্ট্র সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত প্রস্তাব সংশোধন বা সমঝোতার বিষয়ে কোনো মন্তব্য জানানো হয়নি। সংলাপের পরবর্তী ধাপগুলোতে এই বিতর্ক আরও ঘনীভূত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।