
ছবি: সংগৃহিত।
সপ্তাহান্তে নিউইয়র্কে জ্যাকসন হাইটসের বৈচিত্র্যময় জনপদটা যেন এক ভিন্ন রূপ নিল। রোদঝলমলে বিকেল, ব্যস্ত সড়কের ভিড়ের ভেতরে হাতে পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রবাসী তরুণ-তরুণীরা।
পোস্টারে লেখা 'প্লাস্টিক নয়, প্রকৃতির পাশে দাঁড়াই', 'জলবায়ু রক্ষা মানেই জীবন রক্ষা'। পথচারীদের অনেকেই থেমে কৌতূহলভরে পোস্টার পড়ছেন, কেউ কেউ ছবি তুলছেন।
হঠাৎই ঝড়ো বৃষ্টি নেমে আসলে প্রকৃতির খেয়ালী বৈপরীত্যে ধরার কর্মসূচি যেন আরও প্রাসংগিক হয়ে উঠে।
এভাবেই পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ১৭ আগস্ট রোববার আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা, ধরা’ (ধরা)।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতামূলক লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ করা হয়। শিশুদের হাতে ছিল হাতে আঁকা রঙিন পোস্টার। অনেকেই এসে স্বেচ্ছায় তাদের সঙ্গে যোগ দেন। প্রবাসী জীবনের ব্যস্ততা ভুলে এদিন সবার মনে একটাই স্লোগান, 'প্রকৃতি বাঁচাও, ভবিষ্যৎ বাঁচাও।'
আলোচনা সভা হয় ধরা উত্তর আমেরিকার সমন্বয়ক সেলিনা উদ্দিনের সভাপতিত্বে। সভায় বক্তৃতা দেন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী, টাইম টেলিভিশনের সিইও আবু তাহের, লেখক-সাংবাদিক রওশন হক, নারী নেত্রী মেরী জোবাইদা, সংগঠক শাহানা বেগম, এবং নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি সুমাইয়া চৌধুরী, এক্টিভিস্ট রোমানা আহমেদ, জাকির হোসেন, মিজানুর রহমান, হুমায়ুন কবির লিটন, মনিষা তৃষা, রওশন জাহান, রাশিদা আখতার, আবু চৌধুরী, আফিয়া বেগম,আজফার চৌধুরী, সৈয়দ ইলিয়াস খসরু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন প্রতিদিনের বাস্তবতা। বাংলাদেশে প্লাবন, বন্যা, নদীভাঙন, বন উজাড়, শিল্প বর্জ্য দূষণ সবকিছুই মানবজীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে। সবচেয়ে আলোচিত হয়ে ওঠে সিলেটের সাদা পাথর কেলেঙ্কারি। বক্তারা বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট আর পরিবেশ ধ্বংসের ঘটনায় সরকারের নীরবতা অগ্রহণযোগ্য।
এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে সরকারের কাছে স্বারকলিপি প্রদানের ঘোষণা দেন তারা।
প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী বলেন, 'আমাদের দেশ নদী, পাহাড়, সবুজে ভরা। প্রবাসে থেকেও আমরা সেই দেশকে ভালোবাসি। পরিবেশ রক্ষায় আমরা সচেতন হলে বাংলাদেশও লাভবান হবে।'
সভায় বক্তারা আরও বলেন, প্রবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ যেমন গাছ লাগানো, প্লাস্টিক বর্জন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, এসবকেই এগিয়ে নিতে হবে। নিউইয়র্কে প্রবাসীদের ছোট ছোট উদ্যোগও বাংলাদেশের পরিবেশ আন্দোলনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে ছিল উচ্ছ্বাস ও দায়িত্ববোধের এক আবহ। জ্যাকসন হাইটসের প্রবাসী জনপদ যেন এক বিকেলে পরিবেশ আন্দোলনের ক্ষুদ্র কিন্তু দৃঢ় মঞ্চে পরিণত হয়। সভা শেষে সবাই একমত হন 'আমরা যদি সচেতন না হই, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা নিরাপদ পৃথিবী উপহার দিতে পারব না।'