ছবি: সংগৃহীত।
সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এলাকায় পাথর লুটপাট ও দখলবাজির ঘটনায় নতুন করে বেরিয়ে এসেছে ভয়ঙ্কর সব তথ্য। পর্যটন করপোরেশনের মালিকানাধীন ৫০ একর সরকারি জমি জোরপূর্বক দখল করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে পাথর রাখার স্থান ও পাথর ভাঙার কল। ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে সীমানা প্রাচীর।
প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের ছত্রছায়ায় এসব অপকর্ম দিনের পর দিন প্রকাশ্যেই চললেও প্রশাসন এখনও পর্যন্ত জমি উদ্ধার করতে পারেনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভোলাগঞ্জ রেলওয়ে বাঙ্কার ও সাদা পাথর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পাচার চলে আসছে। বিশেষ করে গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চক্রটি প্রকাশ্যে সরকারি জমি দখলে নেয়। এমনকি বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সীমানা প্রাচীরও বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে ফেলে দেয় তারা।শুধু জমি দখলই নয়, সেখানে রাখা হচ্ছে লুট হওয়া পাথরের বিশাল স্তূপ, বসানো হয়েছে অসংখ্য পাথর ভাঙার মেশিন। এখান থেকেই দিনরাত চলে পাথর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানোর প্রক্রিয়া। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই জমি ব্যবহারের নামে ভাড়া ও চাঁদা বাবদ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েকটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী।
কোম্পানীগঞ্জের কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই দখল ও লুটপাটে রাজনৈতিক দল, মত কিংবা আদর্শের কোনো বিভাজন ছিল না। বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ সব দলের প্রভাবশালীরা একসাথে যোগসাজশ করে সরকারি সম্পদ লুট করেছে। বিশেষ করে স্থানীয় বিএনপির একটি বলয় সরাসরি জমি দখল ও ভাড়া আদায়ে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে কেউই মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
সরকারি জমি দখলের ব্যাপারে ছাত্রদের নাম জড়ানোর চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে এনসিপির সিলেট জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ শিপন বলেন, ‘ছাত্ররা কোনোভাবেই এসব দখল বা দেয়াল ভাঙার সঙ্গে জড়িত নয়। যারা আগে জমি দখলে রেখেছিল তারাই সুযোগ বুঝে আবারও নিজেদের ফায়দা হাসিল করেছে। এখন ছাত্রদের নাম ঘাড়ে চাপিয়ে অপকর্ম আড়াল করার চেষ্টা চলছে।’
অন্যদিকে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির স্থগিত হওয়া সভাপতি ও পলাতক নেতা সাহাবুদ্দিন আহমেদ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘আমরাই বারবার প্রশাসনকে জানিয়েছি এই লুটপাট বন্ধ করতে। কিন্তু ইউএনও কোনো পদক্ষেপ নেননি, পুলিশও নীরব ছিল। এখন আমাদের ওপর দায় চাপিয়ে সবাই বাঁচতে চাইছে।’
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক (বিপণন ও পরিকল্পনা) সালেহা বিনতে সিরাজ জানান, পর্যটন স্পট সুরক্ষায় ২০২৩ সালে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দেন, নতুন করে প্রাচীর নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে সম্প্রতি সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শন শেষে সিলেটের পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পাথর লুট, দখলসহ যাবতীয় অপরাধে কারও বিরুদ্ধে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ ইতোমধ্যে অভিযুক্ত কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আলম আদনানকে বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে।
তবে নতুন জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলম দখল হওয়া জমি উদ্ধারে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি। তিনি জানিয়েছেন, পর্যটন স্পটগুলোতে চুরি হওয়া পাথর প্রতিস্থাপনের পর সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযান শুরু করা হবে।
সরকার ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরকে ঘিরে পর্যটন বিকাশের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। তবে প্রভাবশালী দখলদার চক্রের কারণে সেই প্রকল্পের অগ্রগতি এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। কোটি টাকার সরকারি সম্পদ এভাবে প্রভাবশালীদের দখলে পড়ে থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।
