
ছবি: সংগ্রহ
মঈনুল হক বুলবুলঃ অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন-আজকের বৈঠক কেবল একটি প্রতীকী দৃশ্যপট, না কি এটি একটি গোপন মতৈক্যের সূচনা, বা উল্টো কিছু?
বলছি, লন্ডনের ডোরচেস্টার হোটেলের কনফারেন্স রুমে আজ শুক্রবার সকাল ৯টা (বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে একটি বৈঠক-যা ঘিরে যেন গোটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক হৃদকম্পন বিদ্যমান।
বৈঠকের একদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এই একক বৈঠক ঘিরে নানা জল্পনা-কল্পনা, প্রত্যাশা আর সংশয়-সব মিলিয়ে দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ আজ যেন লিখিত হচ্ছে সেই বিলাসবহুল হোটেলের কনফারেন্স চেয়ারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈঠকের ফলাফল হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং রাজনৈতিক মেরুকরণের জন্য এক মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। দুই ঘণ্টার এই আলোচনার ভেতরেই নির্ধারিত হতে পারে নির্বাচনের সময়সীমা, অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয় এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের গতিধারা। বিএনপি সূত্র জানায়, এই বৈঠকে তারেক রহমান নির্বাচন এগিয়ে আনার প্রস্তাব দিতে পারেন, যাতে ডিসেম্বরের আগেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হয়। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত কথিত ‘গণহত্যা’র বিচার নিয়েও আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই বৈঠকের গুরুত্ব কেবল বিএনপির রাজনীতি নয়, গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপরও প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছে দেশবাসী। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করেছেন, এই আলোচনা হতে পারে আমাদের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট। অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও আজকের বৈঠক থেকে আশাবাদী সংকেত পাওয়ার প্রত্যাশা করছে।
এদিকে, বৈঠকের সময় লন্ডনপ্রবাসী বিএনপি নেতাকর্মীরা হোটেল ডোরচেস্টারের সামনে বড় জমায়েতের পরিকল্পনা করছেন। অন্যদিকে, স্থানীয় আওয়ামীপন্থী গোষ্ঠীর সম্ভাব্য বিক্ষোভ ঠেকাতেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিএনপিপন্থীরা।
বৈঠকের পটভূমি হিসেবে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে গতকাল বৃহস্পতিবার। ড. ইউনূস সেন্ট জেমস প্যালেসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের হাত থেকে ‘কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করেন-যা তাকে কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিকভাবে আরও জোরালো অবস্থানে বসিয়েছে। এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং তারেক রহমানের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা একসঙ্গে একটি গভীর বার্তা বহন করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আজ যদি আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়, তাহলে দেশের জন্য অপেক্ষা করছে একটি নতুন আশার সূর্যোদয়। আর যদি আলোচনা ব্যর্থ হয়, তবে রাজপথে রাজনৈতিক সমাধানে নতুন অধ্যায় শুরুর আশঙ্কা থেকেই যায়।
এই মুহূর্তে গোটা জাতি তাকিয়ে আছে লন্ডনের ডোরচেস্টার হোটেলের দিকে-যেখানে হয়তো বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের আগামী দিনের ইতিহাস লিখিত হচ্ছে নীরবে, অথচ গভীর উত্তেজনায় গোটা জাতি মন ও মননে।