শিরোনাম
লুটপাটে হুমকির মুখে ধলাই সেতু, রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন নির্বাচন ভণ্ডুলে ষড়যন্ত্র করছে পরাজিত শক্তি: প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সুরমায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাঁচাতে জালিয়াতির অভিযোগ বিএনপির ব্যর্থ অন্তর্বর্তী সরকার তরুণদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে: মৌলভীবাজারে নাহিদ ইসলাম সুনামগেঞ্জে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় যুবক খু*ন র‍্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমনের বাবার ওপর হামলা থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার যুদ্ধ: এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সঙ্কট ৩ আগষ্ট ঢাকার সমাবেশ থেকেই জুলাই ঘোষণাপত্র আদায় করে নিবো: নাহিদ ইসলাম সিলেটে এনসিপি’র পদযাত্রা শেষ, সভা চলছে

https://www.emjanews.com/

6607

opinion

প্রকাশিত

২৬ জুন ২০২৫ ১৯:২৮

আপডেট

২৬ জুন ২০২৫ ১৯:৩০

মতামত

চা- কন্যা ইতি: ইতিহাসের আলোকবর্তিকা

বরমচাল চা-বাগানে প্রথম কেউ যাচ্ছে ঢাবিতে।

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫ ১৯:২৮

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা-বাগানের শ্রমিক পরিবারের ১৯ বছর বয়সী ইতি গৌড় নজির গড়েছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এর আগে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগেও সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠেই ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

বৃহস্পতিবার তাঁর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা রয়েছে।

বরমচাল চা-বাগানের ডিপো লাইনে ইতিদের বাড়ি। ওই বাগান থেকে এর আগে কেউ কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাননি। ইতি তিন বোনের মধ্যে কনিষ্ঠ। তাঁর মা সুমিত্রা গৌড় ছিলেন চা-শ্রমিক। তিনি দুই বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। বাবা শংকর গৌড় একসময় বাপেক্সের গ্যাসক্ষেত্রে নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন, ২০১৮ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত অসুস্থতায় চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। বর্তমানে তিনিও শয্যাশায়ী।

ইতির শিক্ষা যাত্রা শুরু হয় বরমচাল মিশন স্কুলে। এরপর বরমচাল উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ থেকে ২০২২ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৬৭ এবং ইউছুফ-গণি কলেজ থেকে ২০২৪ সালে এইচএসসিতে ৪.৮৩ পান। উচ্চমাধ্যমিকের পর থেকেই ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন তিনি। ঢাকা, শাহজালাল, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশ নেন। জগন্নাথে ভালো না হওয়ায় হতাশ হলেও শাহজালালে সুযোগ পান এবং সেখানে ভর্তি হন। তবে ঢাবির ফল প্রকাশের পর ফিন্যান্স বিভাগে সুযোগ পেয়ে শাহজালাল থেকে নাম কাটিয়ে ঢাকাতেই যাচ্ছেন।

ইতির বড় বোন স্মৃতি গৌড় বিবাহিত, স্বামী ঢাকায় শিক্ষকতা করেন। মেজ বোন সুইটি গৌড় ঢাকায় নার্সিং কোর্সে ভর্তি। পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে মায়ের নামে থাকা দুই বিঘা জমি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে বাবার চিকিৎসা, সুইটির পড়াশোনা ও ইতির ভর্তি খরচ চালানো হয়।

তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় কিছু শিক্ষানুরাগী এবং চা-বাগানের শিক্ষার্থী সংগঠনগুলো সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

ভবিষ্যৎ স্বপ্ন প্রসঙ্গে ইতি বলেন, 'ভালোভাবে লেখাপড়া শেষ করে ভালো চাকরি পেতে চাই। পরে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএ) হওয়ার ইচ্ছা আছে।'

মেয়ের এ অর্জনে গর্বিত বাবা শংকর গৌড় বলেন, 'বাপেক্সে চাকরি করার সময় বিশ্ববিদ্যালয়পড়া বড় বড় স্যারদের দেখে ভাবতাম, যদি আমাদের মেয়েও একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারত! ঈশ্বর সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন।'

বরমচাল বাগানের আরেক শিক্ষার্থী, শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের নিত্যানন্দ দাস বলেন, ইতির এই সাফল্য আমাদের বাগানের গর্ব। সে আমাদের অনুপ্রেরণা।

তবে বরমচাল চা-বাগানের ব্যবস্থাপক শাহরিয়ার পারভেজ বলেন, ইতির বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার খবর আমার জানা ছিল না। এখন থেকে খোঁজখবর রাখব।

চা-বাগানের নিভু নিভু আলো থেকে এবার দীপ্ত এক জ্যোতিষ্ক হয়ে উঠছেন ইতি গৌড়- যার গল্প অন্যদের সাহস জোগাবে, স্বপ্ন দেখাবে।