
চা-শ্রমিকদের মানবেতর জীবন, বৈষম্য ও অধিকারবঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে যাচ্ছে তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের সম্মেলন।
রবিবার (২৯ জুন) শ্রীমঙ্গলের জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির প্রথম জাতীয় সম্মেলন।
সকাল ১০টায় শুরু হবে দিনব্যাপী চা-শ্রমিক সমাবেশ। এতে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রামের শতাধিক চা-বাগান থেকে আগত শ্রমিক, ছাত্র ও যুব প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন।
বর্তমানে চা-শ্রমিকরা দৈনিক মাত্র ১৭৮.৫০ টাকা মজুরি পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কঠিন বাস্তবতায় দিন পার করছেন। চিকিৎসা, শিক্ষা, সুপেয় পানি, টয়লেট ও বাসস্থানের মতো মৌলিক সেবা থেকেও তারা বঞ্চিত।
জরাজীর্ণ ঘর, সীমিত ওষুধ, পানি সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ লাইন- এই চিত্র আজও পাল্টায়নি।
শিক্ষা ব্যবস্থার করুণ দশাও বাস্তবতার আরেক দিক- দুই রুমের স্কুল, হাতে গোনা কয়েকজন অস্থায়ী শিক্ষক, পাঠদানের উপযোগী পরিবেশের অভাব।
ভূমির মালিকানা না থাকায় চা-শ্রমিক পরিবারগুলো পেশাগতভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আটকে রয়েছে। এ অবস্থাকে আন্দোলনকারীরা আখ্যা দিয়েছেন 'আধুনিক দাসত্ব' হিসেবে।
এই বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর গঠিত হয় ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি, যারা নিয়মিত আন্দোলনের মাধ্যমে চা-শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের পথ রচনা করে চলেছে।
সম্মেলনে চা-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন (প্রস্তাবিত) নামে সংগঠনটির নতুন পরিচয় ঘোষণা করা হবে।
গৃহীত হবে ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র, গঠিত হবে একটি নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিও।
সম্মেলনে উপস্থাপিত ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- দৈনিক মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ; ভূমির মালিকানা প্রদান; স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সার্বজনীন অধিকার নিশ্চিত; জাতীয়ভাবে ২০ মে-কে "চা-শ্রমিক দিবস" হিসেবে ঘোষণা
সংগ্রাম কমিটির নেতারা বলছেন- শতবর্ষের বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে হলে চা-শ্রমিকদের নিজের নেতৃত্বে, সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতেই হবে। তারা দেশের মানবিক ও সচেতন জনগণকে এই সংগ্রামে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
১৯২১ সালের ঐতিহাসিক মুল্লুক চলো আন্দোলন আজও চা-শ্রমিকদের লড়াইয়ে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে।
এবারের সম্মেলন হতে যাচ্ছে সেই ঐতিহাসিক চেতনার আধুনিক ধারাবাহিকতা- একটি নতুন দিগন্তের সূচনা।