
ছবি: ইমজা নিউজ
ডাক্তার নেই, নেই চিকিৎসা সরঞ্জাম। জনবল সংকটে অযত্ন, অবহেলায় নাজুক সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। একসময় এলাকার মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রধান ভরসা প্রতিষ্ঠানটি যেন নিজেই এখন রোগী!
চারখাই ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের একমাত্র সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র এটি। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জকিগঞ্জ উপজেলার দুটি ইউনিয়ন ও বিয়ানীবাজার উপজেলার অন্যান্য এলাকার অনেকেই এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। অথচ গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে কোনো মেডিকেল অফিসার নেই। নেই ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটরও। একজন ডিএমএফ (ডিপ্লোমা মেডিকেল ফার্মাসিস্ট) দিয়ে প্রায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে জনবল সংকট ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলরা কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না।
অবকাঠামো জরাজীর্ণ, নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম
স্থানীয়দের ভাষ্য, ভবনটি আগাছায় ভরে গেছে। অধিকাংশ দরজা-জানালা ভাঙা। ভবনের মূল কাঠামোতে ফাটল দেখা দিয়েছে, বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে পড়েছে। ভাঙা কাঁচের জানালা দিয়ে বর্ষায় পানি ঢুকে আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। গ্রিলেও ধরেছে জং। ঔষধ বিতরণ কক্ষের মেঝেতে ফাটল থাকায় সেখান দিয়ে পানি ও প্রাণঘাতী প্রাণী প্রবেশ করার আশঙ্কাও রয়েছে।
ভবনের নিচতলায় থাকা তিনটি টয়লেটের মধ্যে দুটি ব্যবহারের অনুপযোগী। পরিবেশ স্যাঁতস্যাঁতে ও অপরিচ্ছন্ন। নেই পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নিরাপত্তাকর্মী বা আয়া। সন্ধ্যার পর এখানে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
মানবিক সেবায়ও ঘাটতি
প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১১০ জন রোগী এই হাসপাতালে সেবা নিতে আসেন। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল ও গোপনীয়তা না থাকায় অনেক সময় রোগীদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। রোগী পরীক্ষার বেড সরু ও অপ্রতুল, চিকিৎসকের কক্ষে নেই যথাযথ পর্দা।
চারখাইয়ের বাসিন্দা আছিয়া বেগম বলেন, ‘সাধারণ হাত কাটা বা জ্বর হলেও এখানে ডাক্তার পাওয়া যায় না। অনেক সময় হাসপাতালটি বন্ধ থাকে। তখন বাধ্য হয়ে ২৫ কিলোমিটার দূরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়।’
আরেক সেবাপ্রত্যাশী শাহীন আলম হৃদয় বলেন, ‘সরকার গরিব মানুষের জন্য এই হাসপাতাল নির্মাণ করলেও বাস্তবে এখানে চিকিৎসা নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে সচল করার দাবি জানাই।’
চারখাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ আমি এখানে দীর্ঘদিন ধরে আছি। রোগীদের চাপ সামলে যতটুকু সম্ভব সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। জনবল সংকট দূর হলে সাধারণ রোগীরা আরও ভালো সেবা পাবেন। চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা দেখে থাকেন সেখানে আমার পক্ষে সঠিক করে বলা সম্ভব নয় যে কবে নাগাদ সংকট দূর হবে। আমার পক্ষে একা সবকিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। যতটুকু পারছি, ততটুকুই সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সদ্য এই উপজেলায় যোগ দিয়েছি। পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানি না। তবে চারখাই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবো, যাতে এই অঞ্চলের মানুষ সহজেই প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা পেতে পারে।