
এআই জেনারেটেড ছবি
বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও ভয়াবহতার পথে। সিলেটেও বাড়ছে এর প্রকোপ। ২০২৩ সালের ভয়াল স্মৃতিকে যেন আবার জাগিয়ে তুলছে চলতি বছরের পরিসংখ্যান। জুন মাসেই গত পাঁচ মাসের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে ২০২৫ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর হতে পারে সবচেয়ে মারাত্মক ডেঙ্গু মহামারি।
সিলেটে এ নিয়ে চলতি মৌসুমে জানুয়ারি থেকে জুলাই এর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ছিল ৪০ জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ৬ মাসে বিভাগে ডেঙ্গুতে কারো মৃত্যু না হলেও ৪০ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে চলতি জুলাই মাসের ৮ দিনে শনাক্ত হয়েছেন ৭ জন। এছাড়া গত জুন মাসে শনাক্ত হয়েছেন ১৪ জন। মে মাসে শনাক্ত হন ১২ জন। এপ্রিল ও ফেব্রুয়ারী মাসে কোন রোগী শনাক্ত না হলেও জানুয়ারী মাসে ৬ ও মার্চ মাসে ১ জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হন।
বর্তমানে সিলেট বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিসাধীন আছেন ২জন। তারা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চলতি মৌসুমে বিভাগে আক্রান্ত ৪০ ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে সিলেট জেলার ১০ জন, মৌলভীবাজার জেলার ১৩ জন, হবিগঞ্জে ১৪ জন ও সুনামগঞ্জের ৩ জন রয়েছেন।
ডেঙ্গুর বিস্তারের পেছনে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও নাগরিক অসচেতনতা। বিশেষ করে অল্প সময়ের বৃষ্টিতে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থায় জমে থাকা পানি, নির্মাণাধীন ভবনের খোলা ড্রাম, ফুলের টব, বালতি বা পরিত্যক্ত পাত্রে জমা পানি হয়ে উঠছে এডিস মশার অনুকূল প্রজনন ক্ষেত্র।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ, অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার গবেষণায় দেখিয়েছেন দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় ‘ব্রেটো ইনডেক্স’ ২০-এর ওপরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এটি মারাত্মক ঝুঁকির ইঙ্গিত।
বিশেষ করে বরগুনা, বরিশাল, কুমিল্লা, কক্সবাজার, গাজীপুর, চাঁদপুর, মাদারীপুর, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালীসহ অন্তত ১১টি জেলা আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ হয়ে উঠতে পারে।
২০২৩ সাল ছিল বাংলাদেশের ডেঙ্গু ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বছর। আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ৭০৫ জনের। আগের ২৩ বছরের সম্মিলিত মৃত্যুর সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যায় ওই বছর।
চলতি বছরের গ্রাফ বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর পরিস্থিতি ২০২৩-এর চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে।
অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। মানুষও ডেঙ্গুকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমরা গত বছরই বরগুনা নিয়ে সতর্ক করেছিলাম, কেউ শোনেনি। এখন আবার সেই বিপদ ফিরে আসছে।’
অপরিকল্পিত নগরায়ন, জনসংখ্যার ঘনত্ব, জলাবদ্ধতা, নির্মাণস্থলের পানির আধার, সব মিলিয়ে শহর যেন হয়ে উঠেছে এডিস মশার প্রজননকারখানা।
অধ্যাপক বাশার আরও বলেন, ‘অনেকে জানেনই না, মশা কোথায় ডিম পাড়ে, কীভাবে লার্ভা ধ্বংস করতে হয়। বাড়ির ছাদ, বারান্দা, পাত্রে জমা পানি প্রতিনিয়ত অনাদরে মশার বাসা হয়ে উঠছে। এটাও বড় বিপদ।’