https://www.emjanews.com/

6287

international

প্রকাশিত

১৬ জুন ২০২৫ ১৯:১৯

আন্তর্জাতিক

মধ্যপ্রাচ্য

ইরান- ইজরাইল যুদ্ধের সর্বশেষ

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫ ১৯:১৯

ছবি- সংগ্রহ

ইএন ডেস্ক: ইরান ও ইজরাইলে মধ্যে চলমান হামলা-পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ২৪৮ জন। এর মধ্যে ইজরাইলে ২৪ জন এবং ইরানে পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তাসহ ২২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। সংঘাত ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে। এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইজরাইলের হামলার প্রেক্ষিতে জরুরি বৈঠকে বসেছে।

ইরান এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে দাবি করেছে ইজরাইল। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইজরাইলের সেনাবাহিনীর হোম ফ্রন্ট কমান্ড। তারা জানিয়েছে, এই নিহতদের বেশির ভাগই আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন না।

আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, ইজরাইল দাবি করেছে, গত কয়েক দিনে ইরান প্রায় ৩৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ইরানের একেকবারের হামলায় ছিল ৩০ থেকে ৬০টি ক্ষেপণাস্ত্র।

অন্যদিকে, ইরান জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় চালানো ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তেহরান।

ইজরাইলের ভূখণ্ডে রোববার দিবাগত রাতে একের পর এক ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আটজন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। বলা হয়েছে, রাতভর তেল আবিব ও হাইফাসহ বিভিন্ন ইসরায়েলি শহরে হামলা চালিয়েছে ইরান।

ইজরাইল ও ইরানের মধ্যে গত শুক্রবার হামলা, পাল্টা হামলার শুরু থেকে এ পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় আজ সোমবার দুপুর) ইসরায়েলে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল রোববার জানিয়েছে, গত শুক্রবারের পর থেকে ইরান জুড়ে ইজরাইলের হামলায় মোট ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। খবর বিবিসির।

ইজরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইরানের ১২০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করেছে। চার দিনের হামলায় ইরানের মোট ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারের এক তৃতীয়াংশ ধ্বংস করেছে বলে দাবি করেছে আইডিএফ। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেন, শুধু গত রাতেই ইসরায়েলি বিমানবাহিনী ২০টির বেশি লঞ্চার ধ্বংস করেছে। তা নাহলে মাত্র কয়েক মিনিট পর এই লঞ্চারগুলো দিয়ে ইজরাইলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ত ইরান।

ডেফরিন আরও জানান, ইজরাইল ইরানের মধ্যাঞ্চলের ইস্পাহান শহরে প্রায় ১০০টি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। প্রায় ৫০টি যুদ্ধবিমান ক্ষেপণাস্ত্রের গুদাম, লঞ্চার ও কেন্দ্রগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালায়।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের ভূখণ্ডে একের পর এক ইসরায়েলি হামলার সমালোচনা করতে বলেছে তেহরান। পারমাণবিক ইস্যুতে কূটনৈতিক আলোচনা অব্যাহত রাখতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে এটা করতে হবে বলেছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাঈল বাকাই আজ সোমবার এ কথা বলেছেন। খবর বিবিসির।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার পারমাণবিক ইস্যুতে গতকালের পূর্বনির্ধারিত কূটনৈতিক আলোচনা স্থগিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসমাঈল বাকাই আজ এ মন্তব্য করলেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনাকে ‘অর্থহীন’ উল্লেখ করে মুখপাত্র ইসমাঈল বাকাই বলেন, আলোচনা অব্যাহত রাখতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ইসরায়েলি হামলার সমালোচনা করতে হবে।

তিনি জানান, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ইরানের পার্লামেন্টে একটি বিল উত্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে। ফোনালাপে তাঁরা আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছে তুরস্ক।

আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, দুই নেতার বৈঠকের পরে এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, ইরান-ইজরাইল বিরোধ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত এবং এই সংকটে কূটনীতিকে গুরুত্ব দিতে হবে- এ বিষয়ে উভয় নেতা একমত হয়েছেন। এরদোয়ান বলেছেন, সংকট নিরসনের একমাত্র পথ হলো ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা পুনরায় শুরু করা।

দুই নেতা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিসহ সব বিবাদ শুধুই রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে সমাধান করতে হবে।

পারমাণবিক উত্তেজনা ও আইএইএ-র জরুরি বৈঠক
ইসরায়েলের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (IAEA) বোর্ড অফ গভর্নরস আজ সোমবার একটি জরুরি বৈঠকে বসেছে। ইরানের অনুরোধে এবং রাশিয়া, চীন ও ভেনেজুয়েলার সমর্থনে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।

তেহরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, আলোচনার পথ যদি অবরুদ্ধ হয়, তবে তারা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT) থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

 

ইজরাইলের পারমানবিক হামলা চালাবে পাকিস্তান

ইজরাইল ইরান দফায় দফায় হামলা ও পাল্টা হামলার মধ্যেই শঙ্কা বাড়ছে ইজরাইলের পারমাণবিক হামলার। তবে তেমন কিছু হলে, অর্থাৎ ইজরাইল ইরানে পারমাণবিক হামলা করলে পাকিস্তানও পরমাণু বোমা ব্যবহার করবে বলে দাবি করেছেন ইরানের একজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা।

পাকিস্তান এ বিষয়ে ইরানকে আশ্বস্ত করেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সোমবার (১৬ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর মধ্যেই বিধ্বংসী তথ্য সামনে এনেছেন ইরানের এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা। তিনি দাবি করেছেন, ইজরাইল যদি ইরানের ওপর পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে পাকিস্তান ইজরাইলের বিরুদ্ধে পারমাণবিক হামলা চালাবে।

এই মন্তব্য করেছেন জেনারেল মহসেন রেজায়ি। তিনি ইরানের এলিট বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) একজন সিনিয়র কর্মকর্তা এবং দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইজরাইলের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে ইরানকে দেওয়া পাকিস্তানের এই আশ্বাসকে সরাসরি সামরিক প্রতিশ্রুতি না বলে কূটনৈতিক সমর্থন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ এই সংঘাত শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক দেশ এতে কৌশলগতভাবে জড়িত।

 

ইরানের পাশে নেই মধ্যপ্রাচ্যের অনেকেই

নিজেদের কৌশলগত অবস্থানের কারণে মধ্যেপ্রাচ্যের অনেক দেশই ইরানের পাশে নেই। অনেকে দায়সারা বিবৃতি দিয়েছে কেবল। কেউ কেউ ইজরাইলের হামলার নিন্দা জানালেও ইরানকেও শান্ত থাকতে বলছে। তবে মিত্র দেশ পাকিস্তান ইরানের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেছে। যদি পারমানবিক হামলা করে ইজরাইল তবে পাকিস্তানও ইজরাইলে হামলা চালাবে

ইজরাইলের নজিরবিহীন হামলায় সামরিকভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে ইরান। হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ একক বা জোটগতভাবে ইজরাইলের নিন্দা জানিয়েছে।

ইরানে গত শুক্রবার ভোররাতে ইজরাইলের হামলার কয়েক ঘণ্টা পর এক বিবৃতিতে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভ্রাতৃপ্রতিম ইরানের ওপর ইজরাইলের এই বর্বর হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ওমান, কাতার, কুয়েত ও বাহরাইনও প্রায় একই সুরে বিবৃতি দিয়েছে। তাই সৌদি আরবসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ ইজরাইলের নিন্দা করার পাশাপাশি ইরানের প্রতিও শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

এই বিবৃতি ছাড়া সংঘাত বন্ধে ইজরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি বা বিশ্বজনমত তৈরির পক্ষে তারা কোনো কাজ করছে না। ২০১৯ সালে সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় হুতিদের ড্রোন হামলা কিংবা ২০২২ সালে আবুধাবিতে হামলার স্মৃতি এখনো টাটকা। সৌদি আরব ও আমিরাতের দাবি, এসব হামলার সঙ্গে ইরানের পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা ছিল।

জার্মানির বন-ভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক কারপোর জ্যেষ্ঠ গবেষক ও উপসাগরীয় অঞ্চল-বিশেষজ্ঞ সেবাস্তিয়ান সন্স বলেন, সৌদি আরব এখন কোনো ঝুঁকি নয়, স্থিতিশীলতা চায়। তাই দেশটি যুদ্ধের পরিবর্তে কূটনৈতিক সমাধানকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ছিলেন ইরানের ঐতিহাসিক মিত্র। গত ডিসেম্বরে তাঁর পতন হয়েছে। এরপর সেখান থেকে ইরান সব সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। লেবাননে হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র পাঠানোর জন্য সিরিয়াকে ব্যবহার করত ইরান, এখন যা বন্ধ হয়ে গেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ২০২০ সালে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন শুরু করে ইজরাইল, যা আব্রাহাম চুক্তি নামে পরিচিত। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), বাহরাইন, সুদান ও মরক্কো এতে সই করেছে। সৌদি আরবসহ আরও কিছু দেশের এই চুক্তিতে সই করার প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে।

উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো কেন আব্রাহাম চুক্তিতে সই করতে চায়, এর উত্তরে মার্কাস স্নাইডার বলেন, এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরাইলের অত্যাধুনিক সামরিক ও নজরদারি যন্ত্রপাতি পেতে আগ্রহী। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য তারা এসব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে।

অন্যদিকে উপসাগরীয় অঞ্চলের অনেক দেশ ইরানকে নিজেদের জন্য হুমকি মনে করে। এসব হিসাব-নিকাশের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তারা অনেকটা নীরব প্রত্যক্ষদর্শীর ভূমিকা পালন করছে।