বিএনপি আউট, জামায়াত ইন
সিলেটের বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটি
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫ ২২:০২

ছবি- সংগ্রহ
সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনে যেন নেমে এসেছে বিস্ময়ের ঝড়। বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার নতুন অ্যাডহক কমিটির তালিকা দেখে চোখ কপালে তুলছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। মাঠের মানুষ নেই, নেই সংগঠকের গন্ধও। অথচ তালিকায় এমন সব মুখের নাম এসেছে, যাঁদের মধ্যে কেউ কখনো খেলার মাঠে বেড়াতেও যাননি। আর সাংবাদিক কোটায় যাঁকে রাখা হয়েছে, তাঁর পেশাগত জীবনে ক্রীড়া সাংবাদিক হিসাবে খেলাধুলার খবর লেখা হয়নি কখনোই; যাননি খেলার মাঠেও। সিলেটে মোট ৫১টি নিবন্ধিত ক্লাব রয়েছে, তাদের কারো যোগ্যতা হয়নি এ কমিটিতে থাকার।
‘সিলেটের মাঠ আর ঘামের জায়গায় কীভাবে ঢুকে পড়ল পরিচয়হীন মুখ আর রাজনৈতিক সুবিধাভোগীরা?’- এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের মাঝে।
বিভাগীয় কমিশনারের পাঠানো সুপরিচিত ও ক্রীড়াক্ষেত্রে সক্রিয়দের নিয়ে প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা যখন ক্রীড়া পরিষদের টেবিলে পৌঁছায়, অনেকেই আশা করেছিলেন এবার সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনে শৃঙ্খলা ফিরবে। খেলোয়াড়, সংগঠক, সাংবাদিক- সব ক্ষেত্র থেকেই ছিল মাঠে ঘাম ঝরানোদের নাম।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবীর স্বাক্ষরিত স্মারক (নং: ০৫.৪৬.০০০০.০০০.০০৫.১৮.০০০১.২৫.১৫২), তারিখ ৪ মে ২০২৫, অনুযায়ী জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রেরিত রূপরেখা অনুসারে অ্যাডহক কমিটির প্রস্তাব সচিব, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বরাবরে প্রেরণ করা হয়।
প্রস্তাবিত সেই অ্যাডহক কমিটিতে আহ্বায়ক ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, এবং সদস্যসচিব হিসেবে ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক। সদস্য হিসেবে ছিলেন বিসিবির সাবেক পরিচালক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি মো. আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, খেলোয়াড় ও সংগঠক হিসেবে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার এনামুল হক জুনিয়র, সাবেক ক্রিকেটার ও সংগঠক মোস্তফা কামাল পাশা, আম্পায়ার ও অ্যাসোসিয়েশন সিলেটের সভাপতি আশরাফ হোসেইন আরমান, কোচ ও সংগঠক আলী ওয়াসিকুজ্জামান অনি, ক্রীড়া সংগঠক ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ, সাংবাদিক বদরুদ্দোজা বদর, ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট ছাত্র প্রতিনিধি নাঈম শেহজাদ।
কিন্তু সেই তালিকা থেকে ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ, এনামুল হক জুনিয়র ও নাঈম শেহজাদ ছাড়া সবাই বাদ।
তাহলে যারা এসেছেন তারা কে? ক্রীড়াঙ্গনে তাঁদের অবদান কী? তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় কী?
প্রতিবাদ চলছে সর্বত্র। অভিযোগ উঠেছে, নতুন কমিটি জামায়াত-ঘনিষ্ঠদের দিয়ে সাজানো হয়েছে, আর অভিজ্ঞ বিএনপি-ঘরানার সবাইকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যেন রাজনৈতিক পরিচয়ই হয়ে উঠেছে যোগ্যতার একমাত্র মানদণ্ড!
প্রশ্ন উঠছে- কেন বাদ পড়লেন কাইয়ুম চৌধুরী, রেজাউল হাসান লোদী, মোস্তফা কামাল পাশা, আশরাফ হোসেইন আরমান কিংবা ওয়াসিকুজ্জামান অনির মতো মাঠে প্রমাণ রাখা সংগঠকেরা?
ওয়াসিকুজ্জামান অনির হাত ধরে সিলেট জাতীয় লীগে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই মানুষই এখন ‘অপ্রয়োজনীয়’? বাদ পড়েছেন বদরুদ্দোজা বদর- ক্রীড়া সাংবাদিকতার কিংবদন্তি, যিনি ঢাবির রাজনীতি থেকে জাতীয় ক্রীড়া সাংবাদিকতায় একটি প্রতিষ্ঠিত নাম। তাঁর পরিবর্তে জায়গা পেয়েছেন তাঁরই পত্রিকার সেই বার্তা সম্পাদক, যিনি জীবনে খেলাধুলা নিয়ে একটি কলামও লেখেননি!
দেখা যাচ্ছে, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় ও ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট, সর্বজনগ্রাহ্য ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও বাস্তবে হয়েছে উল্টোটা। মন্ত্রণালয় অনুমোদিত কমিটিতে সিলেটের মাঠ-ঘাটের চেনা কোনো মুখ নেই বললেই চলে।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে- এই কমিটি মাঠের জন্য, না কি কারো ঘরের জন্য?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, 'যারা মাঠে নেই, সংগঠনে নেই, খেলায় নেই, তাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার মানে মাঠকে খুন করা, খেলাকে ধ্বংস করে দেওয়া।
খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, 'রাজনীতি আর ক্রীড়া এক জিনিস নয়, এটা যারা কমিটি দিয়েছেন, তারা বোঝেননি। এই কমিটির মেয়াদকালে সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য ভালো সময় আসবে না-এটা স্পষ্টভাবে অনুমান করা যাচ্ছে।'
আম্পায়ার ও অ্যাসোসিয়েশন সিলেটের সভাপতি আশরাফ হোসেইন আরমান বলেন, 'সিলেটে মোট ৫১টি ক্লাব রয়েছে। এই কমিটিতে এসব ক্লাবের কোনো কর্মকর্তাকেই রাখা হয়নি। যাঁরা এই কমিটি তৈরিতে কাজ করেছেন, তারা অন্তত ক্রীড়াঙ্গনের বন্ধু নন- এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়।'