ইসরাইল-হামাস দোহায় পরোক্ষ আলোচনায়
চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ট্রাম্পের।
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫ ২২:৪১

ছবি- সংগ্রহ
গাজা যুদ্ধ থামানো ও জিম্মি বিনিময় সংক্রান্ত ইস্যুতে ইসরাইল ও হামাস সোমবার কাতারের রাজধানী দোহায় আবারও পরোক্ষ আলোচনায় বসেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বৈঠক সামনে রেখে এই আলোচনা নতুন করে গতি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা।
এএফপির খবরে বলা হয়, রোববার দোহায় আলোচনা পর্ব শুরু হলেও সোমবার ১২:৩০ জিএমটি পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার পুনরায় শুরু হওয়া নিশ্চিত হয়নি।
এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানান, উভয় পক্ষকে আলাদা কক্ষে রেখে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে মতবিনিময় হয়েছে।
রোববার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, 'এই সপ্তাহেই হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তি হওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে অনেক জিম্মিকে উদ্ধার করেছি। বাকি যারা আছেন, তাদের অনেককেই এই সপ্তাহেই মুক্ত করা যেতে পারে।'
ওয়াশিংটন সফরের আগে নেতানিয়াহু বলেন, এই বৈঠক চুক্তি এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তার দপ্তর জানায়, দোহায় আলোচনায় অংশ নিতে যাওয়া ইসরাইলি প্রতিনিধিদের তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন, তারা যেন পূর্বশর্ত অনুযায়ীই আলোচনা চালিয়ে যান।
তবে নেতানিয়াহু আগেই হামাসের সর্বশেষ জবাবকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেছেন।
দুই ফিলিস্তিনি সূত্র জানায়, সর্বশেষ প্রস্তাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং এই সময়ের মধ্যে হামাস ১০ জন জীবিত ও কিছু মৃত জিম্মি মুক্তি দেবে, আর ইসরাইল ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছেড়ে দেবে।
হামাসের অতিরিক্ত শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার, যুদ্ধবিরতির মেয়াদে হামলা না চালানোর নিশ্চয়তা, এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বে সাহায্য বিতরণ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন।
ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজোগ বলেন, 'সব জিম্মিকে ঘরে ফিরিয়ে আনার জন্য নেতানিয়াহুর ওয়াশিংটন সফর এক গুরুত্বপূর্ণ মিশন।'
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, ট্রাম্প-নেতানিয়াহু বৈঠক সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১০:৩০টায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকতে দেওয়া হবে না।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের হামলায় ইসরাইলের মতে ২৫১ জন জিম্মি করা হয়। এর মধ্যে ৪৯ জন এখনো গাজায় আটক এবং ২৭ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। দুটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সময় কিছু বন্দি মুক্তি পেয়েছিলেন, তবে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি না হওয়ায় আলোচনার অগ্রগতি থমকে যায়।
সোমবার গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানায়, ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ছয়জন গৃহহীন ছিলেন, যারা একটি ক্লিনিকে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সালমান কুদুম বলেন, 'আমরা জানি না কোথায় যাব, কী করব। দোহায় যারা আলোচনা করছেন, তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। মানুষ আর সহ্য করতে পারছে না।'
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা গাজাজুড়ে ডজনখানেক ‘সন্ত্রাসী স্থাপনায়’ হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে অস্ত্র গুদাম ও পর্যবেক্ষণ পোস্ট রয়েছে।
দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধের ফলে ২০ লাখের বেশি মানুষ ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছে।
মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) খাদ্য বিতরণের নেতৃত্ব নেয়। তবে এই কার্যক্রমে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ উঠেছে।
হামাসের হামলায় ১,২১৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৭,৫২৩ জন নিহত হয়েছেন বলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জাতিসংঘও এই তথ্যকে গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছে।