
ছবি- গুগল
মানবজাতি সমাজবদ্ধ জীব। সমাজে টিকে থাকার জন্য মানুষকে পরস্পরের সহযোগিতা ও সহমর্মিতার ভিত্তিতে চলতে হয়। কিন্তু কেবল পারস্পরিক সহায়তা নয়, সমাজে বিভিন্ন ধর্ম, জাতি, মত, ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ একত্রে বাস করে বলেই "সামাজিক সহাবস্থান ও সম্প্রীতি" একটি অপরিহার্য ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সহাবস্থান আর সম্প্রীতি সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা এবং উন্নয়নের সহায়ক শক্তি।
সামাজিক সহাবস্থান বলতে বোঝায়—বিভিন্ন শ্রেণি, ধর্ম, মত ও সংস্কৃতির মানুষ একে অপরকে সম্মান করে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা। একজন হিন্দু মুসলমানের উৎসবে যোগ দেন, একজন মুসলমান খ্রিস্টান বন্ধুর বিপদে পাশে থাকেন, এটাই হলো সহাবস্থানের সৌন্দর্য। এর মাধ্যমে সমাজে বিভেদ নয়, বরং ঐক্য ও মানবিক বন্ধন গড়ে ওঠে।
সম্প্রীতির তাৎপর্য
সম্প্রীতি হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহনশীলতা ও ভালোবাসার পরিবেশ। এটি কোনো বাহ্যিক আইনের দ্বারা চাপিয়ে দেওয়া যায় না, বরং অন্তর থেকে আসে। সম্প্রীতির চর্চা হলে সমাজে হানাহানি, হিংসা ও ঘৃণার স্থান কমে যায়। মানুষ তখন পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়, সমাজে স্থিতি ও স্থায়িত্ব আসে।
বাংলাদেশ হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এখানে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান দীর্ঘদিন ধরে একসাথে উৎসব পালন করে এসেছে। পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে ঈদ, দুর্গাপূজা, বড়দিন—সব উৎসবেই দেখা যায় ভ্রাতৃত্ব ও মিলনের দৃশ্য। গ্রামে-গঞ্জে এখনো ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মানুষ একে অপরের বাড়িতে যাতায়াত করে, বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ায়।
যদিও সাম্প্রতিক সময়ে উগ্রতা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, বিভাজনমূলক রাজনীতি ও সামাজিক বৈষম্যের কারণে সহাবস্থান ও সম্প্রীতির ভিত্তি কিছুটা নড়বড়ে হয়ে উঠছে। কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের ভেদ তৈরি করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়। এদের প্রতিহত করতে হলে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম ও রাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
সহাবস্থান ও সম্প্রীতির পথে করণীয়
১. শিক্ষায় মানবিক মূল্যবোধ ও সহনশীলতা শেখানো।
২. ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার চর্চা।
৩. ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে সংলাপ ও বোঝাপড়া বৃদ্ধি।
4. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
৫. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণামূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ।
সামাজিক সহাবস্থান ও সম্প্রীতি কেবল নীতিকথা নয়—এটি একটি সামাজিক প্রয়োজন। আমরা যদি একটি শান্তিপূর্ণ, মানবিক ও উন্নয়নশীল সমাজ গড়তে চাই, তাহলে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহনশীলতা ও ভালোবাসাকে জীবনচর্চার অংশ করতে হবে। আসুন, বিভেদের দেয়াল ভেঙে গড়ে তুলি এক সহনশীল ও সম্প্রীতিপূর্ণ বাংলাদেশ।