ইরান ও ফিলিস্তিনের পাশে ব্রিকস জোট
ব্রিকস সম্মেলনে ইরান ও ফিলিস্তিন প্রশ্নে তীব্র প্রতিবাদ, ট্রাম্পের নীতিরও সমালোচনা
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫ ২৩:৩১

ছবি- গুগল
ব্রজিলের রিও ডি জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে জোটের নেতারা গত মাসে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের ‘সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রতি জোরালো সমর্থনও পুনর্ব্যক্ত করেছে জোটটি। সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ খবর জানায়।
রোববার ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে এই যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়।
ঘোষণাপত্রে ব্রিকস নেতারা ইসরাইলের ১৩ জুনের বিমান হামলা এবং ২১ জুন যুক্তরাষ্ট্রের বাংকার-বাস্টার বোমা হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানান। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ২৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ব্রিকস এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মানবিক ও পারমাণবিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে।
ব্রিকস গাজা যুদ্ধের বিষয়ে ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলে, খাদ্য সরবরাহকে ‘যুদ্ধাস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহারে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। জোটটি ইউএনআরডব্লিউএ-র প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছে, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনই এই সংকটের সমাধান।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় ৫৭,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
ঘোষণাপত্রে ব্রিকস সদস্যরা একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তারা দাবি করে, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এবং আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী। ইরান ও রাশিয়া বর্তমানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার শিকার। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের ২০১৮ সালের পরমাণু চুক্তি বাতিলের পর ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
ব্রিকস নেতারা বিশ্ব বাণিজ্যে একতরফা শুল্ক ও অশুল্ক প্রতিবন্ধকতার সমালোচনা করেন। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি, বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি তার বাণিজ্যনীতিরই পরোক্ষ সমালোচনা।
জবাবে ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল-এ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'যেসব দেশ ব্রিকসের আমেরিকা-বিরোধী নীতিতে যুক্ত হবে, তাদের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০% শুল্ক আরোপ করা হবে।'
ঘোষণাপত্রে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কোনো সরাসরি মন্তব্য না থাকলেও ব্রিকস জোট ইউক্রেনের রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার নিন্দা জানিয়েছে। যদিও রাশিয়া এই যুদ্ধে প্রধান আক্রমণকারী, তবু রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা সমালোচনা করা হয়নি। ঘোষণায় বলা হয়, ‘টেকসই শান্তি ও রাজনৈতিক সমাধান’ই একমাত্র পথ।
ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় ব্রিকস কড়া প্রতিবাদ জানায়। তবে পাকিস্তানের নাম প্রকাশ্যে উল্লেখ করা হয়নি, যদিও ভারত হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে আসছে।
২০০৯ সালে গঠিত ব্রিকস জোটে বর্তমানে ১১টি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে। নতুন সদস্য হিসেবে ২০২৪ সালে যোগ দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, ইথিওপিয়া, মিসর ও ইন্দোনেশিয়া। এবারের সম্মেলনে বেলারুশ, বলিভিয়া, কাজাখস্তান, কিউবা, নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, উগান্ডা ও উজবেকিস্তানকে ‘অংশীদার দেশ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা সম্মেলনে নেতৃত্ব দেন। অধিকাংশ দেশের শীর্ষ নেতা উপস্থিত থাকলেও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং সদ্য নির্বাচিত ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান অনুপস্থিত ছিলেন। চীন, রাশিয়া ও ইরানের পক্ষে অংশ নেন তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
রিও সম্মেলনে ব্রিকসের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্যের পক্ষে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করা হয়। ইরান ও ফিলিস্তিন সংকট, একতরফা নিষেধাজ্ঞা ও বৈষম্যমূলক বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের মধ্য দিয়ে ব্রিকস এক বিকল্প বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান আরও স্পষ্ট করল।