
মুখোমুখি অবস্থান নেওয়া মইনুল ইসলাম ও মাওলানা লোকমান আহমদ (ফাইল ছবি)
সিলেটে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া পরিবহন মালিক শ্রমিকদের কর্মবিরতি নিয়ে মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এবং জামায়াতপন্থী পরিবহন মালিকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সিলেট জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন, জামায়াতপন্থী পরিবহন মালিকদের পরিবহন নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানালেও, জামায়াতপন্থীরা দাবি করছে, তারাই বর্তমানে পরিবহন খাতের প্রকৃত মালিক এবং নেতৃত্বে রয়েছেন।
অন্যদিকে, সিলেট বিভাগ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ডাকা শ্রমিক কর্মবিরতির বিরোধিতা করে জামায়াতপন্থী পরিবহন মালিকরা একে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং মঙ্গলবার থেকে তারা তাদের গাড়ি রাস্তায় নামানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
সোমবার বিকেলে, সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ বাস-মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তিনি জানান, বিমান যাত্রীবাহী পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স এবং পরীক্ষার্থীদের যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহনে কর্মবিরতি কার্যকর থাকবে।
অন্যদিকে, জামায়াতপন্থী পরিবহন মালিক এবং সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেওয়া মাওলানা লোকমান আহমদ এই কর্মবিরতিকে ‘একটি গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া আন্দোলন’ ও ‘সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি জানান, তাদের পরিবহন স্বাভাবিকভাবেই রাস্তায় চলবে।
লোকমান আহমদ দাবি করেন, এই আন্দোলন সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মতবিরোধের প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয়েছে।্
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘মাওলানা লোকমান আহমদ মালিক সমিতির কোনো নেতা নন, তার কোনো গাড়িও নেই। তিনি কে বা কোথা থেকে এসেছেন, তা আমরা জানি না।’ তিনি আরও জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যেকোনো মূল্যে কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
এর জবাবে লোকমান আহমদ বাস ও ট্রাকের কাগজপত্র ও ছবি দেখিয়ে নিজেকে পরিবহন মালিক হিসেবে দাবি করেন। ইমজা নিউজের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি।’ কবে এই পদে নির্বাচিত হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট, হাসিনার সরকার ও অন্যরা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে আমি এই পদে রয়েছি।’
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৫ জুলাই থেকে পাথর কোয়ারি চালু করা সহ পাঁচ দফা দাবিতে পণ্য পরিবহন শ্রমিকরা ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করছেন।
তাদের ৬ দফা দাবিগুলো হলো সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ এর ৩৬ ধারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান ২৫ বছর, সিএনজি ও ইমা লেগুনা এর ক্ষেত্রে ১৫ বছর ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করার প্রজ্ঞাপন বাতিল করা, সিলেটের সকল পাথর কোয়ারীর ইজারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও সনাতন পদ্ধতিতে বালু মহাল এবং পাথর কোয়ারী খুলে দেওয়া, বিআরটিএ কর্তৃক সকল গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বাতিল ও গণ পরিবহন ও পণ্য পরিবহনের উপর আরোপিত বার্ধিত টেক্স প্রত্যাহার করা, সিলেটের সকল ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করন বন্ধ, বিদ্যুৎ মিটার ফেরত ও ভাংচুরকৃত মিলের ক্ষতিপূরণ এবং গাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া পাথর ও বালুর ক্ষতি পূরণ দেওয়া, সিলেটের পরিবহণ মালিক-শ্রমিক ও ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে অবিলম্বে সিলেট থেকে প্রত্যাহার করা ও সড়কে বালু ও পাথরবাহী গাড়িসহ সকল ধরনের পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের হয়রানী বন্ধ করা।
একই দিন সন্ধ্যায় সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিকশা, অটো টেম্পো, ট্যাক্সি ও ট্যাক্সিকার মালিক সমিতি এক বিবৃতিতে জানায়, তারা এই ধর্মঘটের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এবং প্রতিদিনের মতো যাত্রীসেবা চালু থাকবে।