নবীগঞ্জে কয়েক দিনের স.হিংসতায় নি.হত ২, লুটপাট ও ভাঙচুর, শহরে ১৪৪ ধারা জারি
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫ ২২:৪০

নবীগঞ্জে সংঘর্ষের ছবি (সংগ্রহ)
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ শহর ও আশপাশের এলাকায় কয়েকদিন ধরে চলমান সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি।
সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনায় শহরজুড়ে চরম আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে ফের সংঘর্ষে তিমিরপুর গ্রামের এম্বুলেন্স চালক ফারুক মিয়া ও আনমনু গ্রামের লিমন মিয়া নিহত হন।
গত শুক্রবার (৫ জুলাই) রাত থেকে শুরু হওয়া সহিংসতা চতুর্থ দিনে গড়ালে সোমবার সকালে আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের শত শত মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে দুই পক্ষের শতাধিক নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
এ ঘটনায় শহরের দোকানপাট, হোটেল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, যানবাহন ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন।
সোমবার বিকেলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে শহরের আনমনু, নোয়াপাড়া, রাজাবাজার ও তিমিরপুর, চরগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায়।
কয়েক হাজার মানুষ দুই পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
শহরের জে.কে. স্কুল রোড, মাছবাজার, মধ্য বাজার, হাসপাতাল রোডসহ প্রধান বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
বিশেষ করে সুরঞ্জন রায়ের দোকান থেকে নগদ ১ লাখ টাকা ও ৪০ লাখ টাকার মালামাল লুট হয়, আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। রিংকু রায়, বদর মাস্টার ও কানু রায়ের দোকানেও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। ইউনাইটেড হাসপাতাল, হোটেল হাসেমবাগসহ বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা হয়।
শহরে অবস্থানরত যৌথ বাহিনী (পুলিশ, সেনা, বিজিবি) পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অভিযান চালায়। এরপর শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সংঘর্ষে উসকানি দিয়ে একটি চক্র গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক ধোঁয়াশা তৈরি করতে চাইছে। কারণ, আনমনু গ্রাম মূলত মৎস্যজীবী, আর তিমিরপুর অমৎস্যজীবী গ্রাম। এই বিভাজনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
গত শুক্রবার রাতে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশাহিদ আলী আশা ও পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের খরছু তালুকদারের মধ্যে সংঘর্ষ থেকেই উত্তেজনার সূচনা।
পরদিন শনিবার সকালে আনমনু গ্রামের কিছু লোক বাংলাবাজার এলাকার এক নিরীহ গাড়ি চালকের ওপর হামলা চালায়। চালককে মারধর করে তার গাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এর প্রতিবাদে চালকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
রবিবারও সংঘর্ষ ও চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনা ঘটে।
সোমবার সকালে উভয় পক্ষ পূর্বঘোষিত প্রস্তুতি সভা করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের সময় শহরে যখন আতঙ্কে মানুষজন সরে যায়, তখন একটি সংঘবদ্ধ চক্র সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট চালায় বলে জানান শামীম আহমদ নামের এক ব্যবসায়ী।
গত ৪ দিনে শহরের অন্তত ৫০টি দোকানে ভাঙচুর, ব্যাটারিচালিত মিশুক ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মিশুক থেকে ব্যাটারি খুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
সংঘাত নিরসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা, যেমন সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মো. শাহজাহান আলী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরফরাজ আহমদ চৌধুরী, সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী সালিশ বৈঠকের উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থ হয়। ফলে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সমাধানের আহ্বান জানিয়েছি। সংঘর্ষ ও লুটপাটের বিষয়ে তদন্ত চলছে। পুরো বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে রয়েছে।’
শহরের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখনও থমথমে।
সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও সুরাহায় প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।