শাকিল এবার ফিরছেন পরিচালক হয়ে
দর্শকের হৃদয়ে যিনি ছিলেন ‘মাস্টার শাকিল’
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৫ ০৩:১২

ছবি: সংগৃহিত।
৮০ ও ৯০ দশকে শিশু চরিত্রে অভিনয় করে যিনি একসময় ঢাকাই চলচ্চিত্রে দর্শকদের চোখের মণি হয়ে উঠেছিলেন, সেই আজাদ রহমান শাকিল আবারও ফিরছেন অভিনয়ে-এবার নতুন পরিচয়ে, পরিচালক হিসেবে। ‘মাস্টার শাকিল’ নামেই যিনি এক সময় পরিচিত ছিলেন, দীর্ঘ ২৮ বছরের বিরতি শেষে নতুন উদ্যমে আসছেন ছোট পর্দায়।
এক সময়ের পর্দা কাঁপানো শিশু অভিনেতা
‘ডুমুরের ফুল’, ‘ডানপিটে ছেলে’, ‘পুরস্কার’, ‘এতিম’, ‘কলমীলতা’সহ মোট ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন শাকিল। শুধু অভিনয় নয়, তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন শিশুশিল্পী হিসেবে। পাশাপাশি ‘ঢাকায় থাকি’, ‘সংশপ্তক’, ‘মাটির কোলেসহ’ অসংখ্য টেলিভিশন নাটকে তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল। তাঁর অভিনয় যাত্রা শুরু হয়েছিল মঞ্চ নাটক দিয়ে,১৯৭৬ সালে নাট্যনির্দেশক আবু সাঈদ খানের নাটক ‘বাপ্পু কেন কাঁদে’ নাটকের মাধ্যমে।
দীর্ঘ নীরবতা, কিন্তু মন থেকে যায়নি অভিনয়
১৯৯৭ সালে খান আতাউর রহমানের ‘এখন অনেক রাত’ ছিল শাকিলের শেষ চলচ্চিত্র। এরপর যেন পর্দা থেকে হারিয়ে যান তিনি। তবে এই দীর্ঘ বিরতি কোনো অভিমানের ফল নয়, বলেই জানান শাকিল। বরং, তাঁর ভাষায়, ‘যাঁরা আমাকে গড়েছেন, তাঁরা চরিত্রে ভালোবাসা দিতেন। নতুন প্রজন্মের নির্মাতাদের সঙ্গে সে রকম বোঝাপড়া আর গড়ে ওঠেনি। তাই টানও অনুভব করিনি।’
এত বছর পরেও অনেকে তাঁকে চিনে ফেলেন। হাসতে হাসতে বলেন, অনেকেই বলতেন, ‘এই ছেলে, তুমি তো সিনেমায় মারা গেছ!’ তখন মজা লাগত। ছোটবেলায় স্কুলে গেলে অনেকে ভিড় করত। আজও সেই সময়গুলো মনে পড়ে যায়।’
ফেরার গল্প: অভিনয় ও পরিচালনায় একসঙ্গে
ফেরার বার্তা নিয়ে এবার শাকিল শুধু অভিনয় নয়, নিজেই পরিচালনার কাজ শুরু করছেন। নিজের চিত্রনাট্যে একটি নাটক নির্মাণ করছেন, যেখানে তিনিই থাকছেন মুখ্য চরিত্রে। আগামী মাস থেকেই শুরু হচ্ছে এর শুটিং। জানালেন, আরও কিছু কাজের পরিকল্পনা রয়েছে, একে একে এগুলো বাস্তবায়িত করবেন।
ব্যক্তিজীবনে শাকিল: গান, পরিবার ও শিল্পচর্চা
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় বসবাস করছেন শাকিল। ২০১৮ সালে বিয়ে করেন খালেদা রহমানকে। দুই সন্তানের জনক তিনি, তাবরেজ ও ফাওয়াদ রহমান। অভিনয়ের বাইরে গানেও আগ্রহী শাকিল। ছোটবেলা থেকেই গাইতেন, এখন নিজের লেখা ও সুর করা গান নিয়েই থাকেন। এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে তিনটি অ্যালবাম।
সিনেমার হারিয়ে যাওয়া দিন, ফিরে আসুক সেই জৌলুস
একসময় দেশে ছিল প্রায় দেড় হাজার সিনেমা হল। এখন তা নেমে এসেছে শতাধিকের নিচে। এই অবস্থা তাঁকে কষ্ট দেয়। তবে সাম্প্রতিককালে কিছু সিনেমার সাফল্য তাঁকে আশাবাদী করে তুলেছে। বলেন, ‘সিনেমা মানেই ছিল উৎসব। হলগুলো ছিল প্রাণচঞ্চল। এখন সে জায়গায় মার্কেট কিংবা ধ্বংসাবশেষ। তবে এখনো যখন দেখি মানুষ হলে গিয়ে সিনেমা দেখছে, তখন ভালো লাগে।’
আজাদ রহমান শাকিলের ফেরা যেন শুধু একজন শিল্পীরই ফিরে আসা নয়, বরং আমাদের হারিয়ে যাওয়া এক সোনালি সময়ের স্মৃতিচারণ ও পুনর্জাগরণ। তিনি যেন আবারও শিশুদের চোখে স্বপ্ন জাগান, পর্দায় ফিরিয়ে আনেন সেই উজ্জ্বল দিনগুলোর ছায়া,
এ প্রত্যাশাই দর্শকদের।