
ছবি: পাকিস্তানি অভিনেত্রী হুমায়রা আসগর (সংগৃহীত)।
পাকিস্তানি অভিনেত্রী হুমায়রা আসগরের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর বিনোদনজগতে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ বাস্তবতা সামনে রেখেই শিল্পীদের মানসিক সহায়তায় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছেন দুই জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঝালায় সারহাদি ও ইয়াশমা গিল। ‘কানেকটিভিটি ওয়ান-অন-ওয়ান’ নামের এই গ্রুপটি এখন রূপ নিচ্ছে একটি সহমর্মিতা ও সহানুভূতির প্ল্যাটফর্মে।
'গ্ল্যামার ও আলোয় ভরা এই ইন্ডাস্ট্রিও অনেক সময় নিঃসঙ্গ'- জিও ডিজিটালের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই বললেন ঝালায় সারহাদি।
তিনি জানান, এই গ্রুপের মাধ্যমে শিল্পীরা সপ্তাহে অন্তত একবার একে অপরের খোঁজ নেবেন, নিজের মানসিক অবস্থা ভাগাভাগি করবেন, হতাশা কিংবা ব্যক্তিগত সংকট নিয়ে কথা বলবেন। গ্রুপে লোকেশন শেয়ারিংয়ের মতো বিষয়ও থাকবে, যাতে বিপদের সময় দ্রুত সাড়া দেওয়া যায়।
ঝালায় বলেন, 'প্রতিবার কোনো ট্র্যাজেডির পর আমরা কেবল শোক প্রকাশ করি, কিন্তু এবার আমরা বাস্তব কোনো পদক্ষেপ নিতে চেয়েছি। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলাটাকে স্বাভাবিক করতে হবে। আমাদের সমাজে এখনও এটি নিষিদ্ধের মতো বিষয়, অথচ সাহায্যের প্রয়োজন সবারই হতে পারে।'
তিনি আরও মনে করেন, সমাজে পরিবর্তন আনার জন্য সেলিব্রিটিদের এগিয়ে আসা উচিত। 'মানুষ আমাদের দেখে ফ্যাশন বা ট্রেন্ড অনুসরণ করে। আমরা যদি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলি, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাবে।'
এই উদ্যোগের প্রেক্ষাপট আরও করুণ করে তুলেছে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুইটি মৃত্যু। ১৯ জুন করাচিতে অভিনেত্রী আয়েশা খানের মরদেহ উদ্ধার হয় এক ফ্ল্যাট থেকে। আর ৮ জুলাই ডিফেন্সের নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার হয় হুমায়রা আসগরের নয় মাস পুরোনো মরদেহ। এই ঘটনাগুলো বিনোদনজগতের ভেতরের গভীর মানসিক ও অর্থনৈতিক সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেছে।
অভিনেতা উমর আলম, যিনি হুমায়রার সঙ্গে একটি রিয়েলিটি শোতে অংশ নিয়েছিলেন, বলেন- 'নতুনদের জন্য মানসিক চাপের পাশাপাশি রয়েছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, কাজের অভাব, পরিবার থেকে দূরে থাকা-সব মিলিয়ে চরম চাপ তৈরি হয়। শোবিজে টিকে থাকতে গেলে কেবল প্যাশন নয়, ধৈর্য এবং বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'এখন সময় হয়েছে ইন্ডাস্ট্রির কাঠামোগত পরিবর্তনের। কাজ দেওয়া হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার ফলোয়ার দেখে, মেধা নয়। এই অনিশ্চয়তা মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।'
‘কানেকটিভিটি ওয়ান-অন-ওয়ান’ শিল্পীদের জন্য কেবল একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ নয়, এটি হয়ে উঠতে পারে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর এক নতুন দৃষ্টান্ত। হয়তো এই প্ল্যাটফর্মই ভবিষ্যতে আরেকটি ট্র্যাজেডি রোধে সহায়ক হবে- মানুষের মনের ভেতরের কষ্ট শুনে পাশে দাঁড়াবে, আলো দেবে।