ছবি: সংগৃহীত।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নির্মিত ‘চাবি’ নামের বাড়িটি মর্যাদাপূর্ণ আর্ক এশিয়া স্থাপত্য পুরস্কার ২০২৫–এ ‘সিঙ্গেল ফ্যামিলি রেসিডেনশিয়াল প্রজেক্টস’ শাখায় স্বর্ণপদক অর্জন করেছে। বাড়িটির নকশা করেছেন বিশিষ্ট স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর।
দেয়ালে কবিতা, পথে প্রকৃতির ছাপ
প্রবেশমুখে কংক্রিটের দেয়ালগুলোতে শুধু নকশাই নয়, খোদাই করা আছে কাব্য-যেন পাঠযোগ্য দেয়াল। আবার বাড়ির আঙিনায় ছড়িয়ে থাকা কংক্রিট স্ল্যাবে দেখা যায় আশপাশের গাছের পাতার ছাপ, ঢালাইয়ের সময়ই যা বসানো হয়েছিল। এতে করে প্রকৃতি ও স্থাপত্যের এক অভিনব মেলবন্ধন ঘটেছে।
নকশায় বিকল্প গন্তব্য
‘চাবি’ বাড়িটি কেবল পারিবারিক আবাস নয়, একে বলা হচ্ছে ‘বিকল্প গন্তব্য’। চাইলে নির্জনে কাটানো যাবে একান্ত সময়, আবার চাইলে দল বেঁধে করা যাবে উৎসব। পুকুর, টিলা, জলাধার আর সবুজ মাঠ মিলিয়ে বাড়িটি যেন এক প্রকৃতির খোলা পাঠশালা।
বসার ঘর থেকে স্মৃতির ফাঁদ
মূল বসার ঘর ও খাবার ঘরের মাঝখানে রয়েছে ‘স্মৃতি ফাঁদ’। কাচের বাক্সে রাখা পুরোনো রেডিও, স্টেথোস্কোপ, সুরমাদানি-পূর্বপুরুষদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র মেঝের নিচে সাজানো হয়েছে। স্থপতির ভাষায়, এটি ‘স্মৃতি প্রত্নতত্ত্ব’, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাবে তাঁদের শিকড়ের কথা।
ভেতর-বাহিরে প্রকৃতির ছোঁয়া
বাড়িটিতে একাধিক সিঁড়ি আছে-কোনোটি ধাপে ধাপে, আবার কোনোটি সরাসরি গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। শোবার ঘর, পারিবারিক আঙিনা কিংবা সুইমিংপুল-সব জায়গাতেই খোলা আকাশ, বাতাস ও সবুজের অবাধ বিচরণ। এমনকি স্নানঘরের কিছু অংশও খোলা আকাশের নিচে, যাতে দিনের আলো কিংবা রাতের জ্যোৎস্না ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।
বাড়িটির মালিক এ টি এম মাহবুবুল আলম চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী নাসিমা আফরোজ চৌধুরীর পারিবারিক আবাস হলেও এটি তৈরি হয়েছে ভাগ করা পরিসরে। চাইলে কিছু অংশ বন্ধ রেখে ব্যবহার করা যায়। ফলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় থাকলেও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগও অটুট থাকে।
চার ঋতুর ভিন্নতা, প্রকৃতির অনুষঙ্গ আর কংক্রিটের ভাষায় ‘চাবি’ হয়ে উঠেছে ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতার জায়গা। ভাবনার দরজায় নতুন তালা খোলার মতোই এই স্থাপত্য-যা আজ স্বীকৃত হলো আন্তর্জাতিক মঞ্চে।
